আস্-সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ!
স্কুল কলেজের শিক্ষকদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ বা কারো
কারো কাছে প্যানিক বিষয় হচ্ছে শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থী বা স্টুডেন্ট কন্ট্রোল বা নিয়ন্ত্রণ
করা। এই বিষয়টি কোনো শিক্ষকের নিকট ডাল ভাত, আবার কোনো কোনো মানুষ এই নিয়ন্ত্রণের ভয়ে
শিক্ষকতা পেশা ছেড়ে গেছেন বা ইচ্ছে থাকলেও শিক্ষকতায় নাম লেখাননি বা লেখাতে চান কিন্তু
শংকায় আছেন। ঠিক তাঁদের জন্য আমার আজকের আর্টিকেল
-যে উপায়ে শ্রেণিকক্ষে সহজেই শিক্ষার্থীকন্ট্রোল বা নিয়ন্ত্রন করা যায়।
আশা করছি সবার জন্য ব্লগ-এর সাথে থেকে
পুরোটা পড়ে মন্তব্য লিখবেন।
প্রথমেই আসি নিয়ন্ত্রণ কী:
কিছু কৌশল বা আচরণ দিয়ে নিজের উপরে অন্যকে আয়ত্বে আনাই
হচ্ছে নিয়ন্ত্রণ। আরো সহজভাবে বলা যায় – যৌক্তিক কোনো কথা বা কাজ শৃংখলভাবে করিয়ে নেওয়ার
যে নেতৃত্ব গুণ তাই-ই নিয়ন্ত্রণ।
এখন জানি নিয়ন্ত্রণ করার জন্য কী কী গুণ থাকা প্রয়োজন:
নিম্নলিখিত গুণ যেসকল শিক্ষকের মাঝে থাকবে সেসকল শিক্ষক
সহজেই শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থী বা স্টুডেন্টদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। মনে রাখতে হবে
বড়দের তুলনায় বাচ্চারা আরো বেশি সংবেদনশীল। তারা চুল থেকে মাথা পর্যন্ত তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে
অবলোকন করে এবং ভালো কিংবা আশ্চর্যজনক কিছু খুব সহজেই ধারন করে, অপরদিকে খারাপ বা অপছন্দীয়
বিষয় একদমই পছন্দ করে না এবং সরাসরি বলে ফেলে, যেটাকে মুখের উপর বলে ফেলা বলা হয়। এ
অবস্থায় বেশ লজ্জা পেতে হয়।
শিক্ষকের পোশাক, ব্যক্তিত্ব যদি স্মার্ট না হয় তবে শিক্ষার্থী
মেনে নেবে না, সেই শিক্ষকের ক্লাস করা পছন্দ করবে না, ফলে অনিয়ন্ত্রিত হয়ে পড়ে শ্রেণিকক্ষ।
সবধরনের শিক্ষামূলক আর্টিকেল পড়তে এখানে ক্লিক করুন
এছাড়াও শ্রেণিকক্ষ নিয়ন্ত্রণ রাখতে চাইলে কড়া দৃষ্টি রাখতে
হবে। প্রতিটি খুটিনাটি বিষয় ধরে ধরে সংশোধনের জন্য ব্যবস্থা নিতে হয়। প্রতিটি অন্যায়ের
জন্য আইন করে দিতে হয়, স্টুডেন্টদের সামনে যা যা বলা হবে সেসব করে দেখাতে হবে। না হলে
শিক্ষার্থীরা আস্থা হারায় এবং সেই শিক্ষকের কথা শুনতে চাইনা। এমন অবস্থায় শিক্ষার্থী
বা শ্রেণিকক্ষ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। আর নিয়ন্ত্রণহীন হলে শিক্ষক তার পেশাকে ভয়
পাওয়া শুরু করে এবং তার হতাশার সৃষ্টি হয়। নিচে আলোচনা করা হলো গুণগুলি:
# আই কন্টাক্ট।
ক্লাসে একজন শিক্ষকের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে আই কন্টাক্ট। এটা বলতে বোঝায়,
চোখের নজরে সকল শিক্ষার্থীকে দৃষ্টির শাসনে রাখা। শুধু শ্রেণিকক্ষে নয়, ভালো লিডার
বা নেতা’র জন্য এই কৌশল থাকা আবশ্যক।
# সুমিষ্টভাষী,
পরিমিতি কথা বলার অভ্যাস। অপ্রয়োজনীয় বা বেশি কথা বললে শিক্ষার্থীরা শিক্ষককে পছন্দ
করবে না। ফলে শিক্ষার্থীদের কাছে আস্থার জায়গা কমে যায়। আস্থা বিশ্বাস না থাকলে নিয়ন্ত্রণ
অসম্ভব।
# রুচিশীল পোশাক
পরিধান। স্মার্ট হতে গিয়ে অগ্রহনযোগ্য পোশাক কেউই পছন্দ করে না। স্মার্টনেস বলতে
সেটাকেই বোঝায়, যেটা রুচিশীল এবং সবার নিকট গ্রহনযোগ্য। তাই আবোল তাবোল পোশাক পরিহার
করলে শিক্ষার্থীর মনের উপর ইতিবাচক প্রভাব বিস্তার করা যায় এবং শিক্ষার্থী ক্লাসে গভীর
মনোযোগী হয়ে শিক্ষককে পলো করে। সে কারণে নিয়ন্ত্রণ করা যায় সহজেই।
# রুচিশীল গেটআপ থাকা জরুরি। নিজের সাজগোছ
অবশ্যই মানসম্মত ও রুচিসম্মত ও স্মার্ট হতে হবে। মাথার চুল থেকে পায়ের নখ পর্যন্ত খেয়াল রাখতে
হবে। কারণ শিক্ষার্থীরা, ভালো ও পছন্দের শিক্ষকের সব খুঁটিনাটি খেয়াল করে দেখে। যদি
একজন শিক্ষক শিক্ষার্থীর কাছে মডেল হিসেবে উপস্থাপন করতে পারে তবে শ্রেণিকক্ষ নিয়ন্ত্রণ
সফল হয়।
সবধরনের শিক্ষামূলক আর্টিকেল পড়তে এখানে ক্লিক করুন
# গ্রহনযোগ্য আচার
ব্যবহার থাকতে হবে। যেমন তেমন ভাষা ব্যবহার করা, আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলা, এমনটা
কখনই নিজের মধ্যে থাকা চলবে না। অনেকে অনেকভাবে ব্যবহার বা কথা-বার্তা বলবে, সহজেই
সেরকম পাল্টা ভাষায় জবাব দেওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
# নিজের ব্যক্তিত্ব
থাকতে হবে। আশেপাশে খেয়াল করলেই দেখবেন, কিছু চেনা বা অচেনা মানুষকে দেখলে কেমন
জানি ভালো লাগে। তার চাল-চলন, কথা বার্তা, চলন-বলন, চাহনি পজেটিভ লাগে। তার সাথে মিশতে
মন চায়। সেই ব্যক্তির উপর অজান্তেই দূর্বল হয়ে পড়া এটাই সেই ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব। ব্যক্তিত্ববান
ব্যক্তিরা সহজেই লিডার হতে পারে, তাদের কথা অন্যরা শুনতে পছন্দ করে। তেমনিভাবে শিক্ষকের
মাঝে ব্যক্তিত্ব গুণ থাকলে শ্রেণিকক্ষ নিয়ন্ত্রণ সহজে করা যায়।
# পজেটিভ দৃষ্টিভঙ্গি
থাকা। কিছু মানুষ আছে ভালো মন্দ যেকোনো কথা শুনলেই নেগেটিভ বা নেতিবাচক মন্তব্য
করে বসে। কিন্তু জ্ঞানী বা আদর্শ মানুষেরা প্রথমে শোনে বোঝে এবং প্রয়োজনে বলে, না হলে
চুপ থাকে। এ ধরনের আদর্শ বা জ্ঞানী মানুষ অন্যের উপর নিয়ন্ত্রণ তৈরি করতে পারে। শিক্ষক
শ্রেণিকক্ষে যত্রতত্র আচরণ থেকে বিরত থেকে দায়িত্বশীল আচরণ করবেন এবং শিক্ষার্থীদের
সাথে পজেটিভ দৃষ্টিভঙ্গি বজায় রাখবেন।
# দায়িত্বশীল হওয়া।
নিয়ন্ত্রণ আনার জন্য দায়িত্বশীল হওয়া অত্যন্ত জরুরি। যে ব্যক্তি যত দায়িত্বশীল সে ব্যক্তি
তত নিয়ন্ত্রণে পারদর্শী। সমাজ, পরিবার, ব্যক্তির উপর নিয়ন্ত্রণ এনে সহজেই পরিচালনা
করতে পারে। এই ধরনের ব্যক্তিকে সবাই ভালোবাসে ও শ্রদ্ধা করে। অনেক স্বামী বা স্ত্রী
আছে, স্বামী বা স্ত্রী যত দূরে থাকে ততই ভালো মনে করে, অনেক সন্তানেরা পিতা মাতাকে
আতংকিত ভয় পায়। এর কারণ হচ্ছে দায়িত্বশীল না হওয়া। ব্যক্তিত্ববান মানুষেরা দায়িত্বশীল
হয়।
# ওয়াদা বা সময়ের
গুরুত্ব দেওয়া। সবকিছু জয় করা সম্ভব যদি সময় ও ওয়াদা ঠিক রাখা যায়। সমাজের সকল
স্তরের মানুষ ওয়াদা পালনকারী ও সময় মেনে চলা ব্যক্তিকে ভালবাসে। একজন ব্যক্তি যদি সময়
ও ওয়াদা পালনকারী হয়, তবে যেকোনো জায়গা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।
# আধুনিকতার সাথে
তাল মিলিয়ে চলা। যেসকল ব্যক্তি আধুনিকতার সাথে বা সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে পারে,
তাদেরকে সবাই পছন্দ করে। আপডেট তথ্য ও সময়ুপযোগি ব্যক্তিকে সবাই গ্রহণ করে। স্মরণ রাখা
ভালো যে, আধুনিকতা মানে নোংরামী নয়। শিক্ষার্থীদের মাঝে যে সকল শিক্ষক আধুনিকতা ছড়িয়ে
দেয় তাঁদেরকে শিক্ষার্থীরা পছন্দ করে।
# শিক্ষার্থীদের ব্যস্ত রাখা। যথাযথভাবে কৌশলে শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের কাজে ব্যস্ত রাখতে হবে। এটাই স্বাভাবিক শিক্ষার্থীরা অলস থাকলে বা ব্যস্ত না রাখলে দুষ্টুমী ও হইচই করবেই। তাই শ্রেণিকক্ষ নিয়ন্ত্রণ করার অন্যতম কৌশল হচ্ছে তাদের ব্যস্ত রাখা।
সবধরনের শিক্ষামূলক আর্টিকেল পড়তে এখানে ক্লিক করুন
# সঠিক তথ্য জানা।
যখন কোনো বিষয় নিয়ে কথা বলা হয় অবশ্যই সঠিক তথ্য জেনে বলতে হবে। আন্দাজে বা অল্প জেনে
কথা বললে বা যুক্তিতর্কে গেলে মানুষ তাকে অপছন্দ করে। ফলে পরবর্তীতে তার উপর বিশ্বাস
রাখে না। সে কারণে সঠিক কিছু জেনে নিয়ে অন্যকে জানানো উচিত। শিক্ষকদের অবশ্যই পড়ালেখা
করে ক্লাসে গিয়ে পড়াতে হবে।
আশা করছি উপরোক্ত বিষয়গুলো সঠিকভাবে প্রয়োগ করতে পারলে
0 মন্তব্যসমূহ
Always stay connected with SOBAR JONNO BLOG
সবসময় যুক্ত থাকুন সবার জন্য ব্লগের সাথে।