শ্রেণি ব্যবস্থাপনায় আধুনিক পাঠদান পদ্ধতি বাস্তবায়নে যোগ্যতা । Modern Teaching Methods in Class Management Eligibility


শ্রেণি ব্যবস্থাপনায় আধুনিক পাঠদান পদ্ধতি বাস্তবায়নে যোগ্যতা  । Modern Teaching Methods in Class Management Eligibility

শ্রেণি ব্যবস্থাপনায় আধুনিক পাঠদান পদ্ধতি  । Modern Teaching Methods in Class Management

প্রথমেই জানা দরকার আধুনিক পাঠদান পদ্ধতি কি  (What is the Modern Teaching Method) : 
একদম সহজ কথায়, গতানুগতিক পদ্ধতির বাইরে যুগের সাথে তাল মিলিয়ে তথা দেশে প্রচলিত বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থাকে শ্রেণিকক্ষে উপস্থাপন করাই আধুনিক পাঠদান পদ্ধতি  (Modern Teaching Method) বলা হয়ে থাকে। সেক্ষেত্রে যেকোন দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা আধুনিকতার সাথে খাপ খাওয়াতে সে দেশের কর্তৃপক্ষ বিশ্বের এগিয়ে থাকা শিক্ষা ব্যবস্থাকে অনুসরণ করে থাকে এবং সকল শিক্ষককে নতুন বা আধুনিক ব্যবস্থা-কে জানাতে শিক্ষক প্রশিক্ষণের আয়োজন করে থাকে, সরকারি বা বেসরকারি শিক্ষা সম্পৃক্ত সংস্থার মাধ্যমে।  শিক্ষকদের আলাদাভাবে পদ্ধতি জানার জন্য চিন্তা করতে হয়না, তবে জানার আগ্রহ থাকতে হবে। যেমন: বর্তমানে বাংলাদেশে সৃজনশীল পদ্ধতিতে পাঠদান করানো হয় গতানুগতিক ধারার বাইরে, এটাই বাংলাদেশে বর্তমানে আধুনিক পাঠদান পদ্ধতি। অর্থ্যাৎ, শিক্ষকদের বক্তৃতা কেন্দ্রিক পাঠদান না হয়ে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণমূলক পদ্ধতির মাধ্যমে।  আর এটা পরীক্ষিত যে, আধুনিক পাঠদান পদ্ধতির মাধ্যমে শ্রেণি ব্যবস্থাপনা সহজ হয় এবং শিক্ষককেও শ্রেণিকক্ষে পরিশ্রম কম করতে হয়।  সে কারণে শ্রেণি ব্যবস্থাপনায় আধুনিক পাঠদান পদ্ধতি (Modern Teaching Method in Class Management) অত্যন্ত সহায়ক ভূমিকা পালন করে থাকে।


শ্রেণি ব্যবস্থাপনায় আধুনিক পাঠদান পদ্ধতি বাস্তবায়নে যোগ্যতা, আধুনিক পাঠদানে শ্রেণি ব্যবস্থপনার গুরুত্ব, আধুনিক শিক্ষকতায় শ্রেণি ব্যবস্থাপনা, আধুনিক শ্রেণি ব্যবস্থাপনায় শিক্ষকের ভূমিকা
শ্রেণি ব্যবস্থাপনায় আধুনিক পাঠদান পদ্ধতি
পাঠকদের বলে রাখি, যেহেতু শ্রেণি ব্যবস্থাপনা কি? ও এর গুরুত্ব বা প্রয়োজনীয়তা (What is Class Management? and it's Importance) নিয়ে বিস্তারিত একটি আর্টিকেল ইতিমধ্যেই প্রকাশিত হয়েছে তাই এখানে সরাসরি শ্রেণি ব্যবস্থাপনায় আধুনিক পাঠদান পদ্ধতি (Modern Teaching Method in Class Management) সম্পর্কে  তুলে ধরা হল। এই পদ্ধতি বাস্তবায়নের মূল কারিগর হচ্ছেন শিক্ষক। তাই একজন শিক্ষকের যোগ্যতাই প্রধান। নিচে শ্রেণি ব্যবস্থাপনায় আধুনিক পাঠদান পদ্ধতি (Modern Teaching Method in Class Management) প্রয়োগে একজন শিক্ষকের কী কী যোগ্যতা থাকা আবশ্যক তা আলোচনা করা হলো।

শ্রেণি ব্যবস্থাপনায় আধুনিক পাঠদান পদ্ধতি  প্রয়োগে শিক্ষকের যোগ্যতা  (Teacher's Qualifications of Modern Teaching Methods in Class Management) :

  • নির্বিঘ্নে শিখন শেখানোর জন্য শ্রেণিকক্ষ (Classroom) -এ কার্যকর পরিবেশ সৃষ্টি করার যোগ্যতা:  শ্রেণি ব্যবস্থাপনায় আধুনিক পাঠদান পদ্ধতি (Modern Teaching Method in Class Management) প্রয়োগে একজন শিক্ষকের সবচেয়ে বড় গুণ হচ্ছে শ্রেণিকক্ষ (Classroom)-এ শিক্ষণ শেখানোর পরিবেশ তৈরি করা। অনেক শিক্ষক আছেন, যাদের ক্লাসে শিক্ষার্থীরা চুপচাপ থাকে না, হৈ চৈ করে এবং শিক্ষকের ক্লাসের দিকে মনযোগী থাকেনা। ফলে ঐ ক্লাসের শিক্ষণ শেখানোর কার্যক্রম ব্যহত হয়। এই যোগ্যতার অভাবে সেই শিক্ষক- শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও প্রতিষ্ঠানের কাছে গ্রহণযোগ্যতা হারান। সে কারনে একজন শিক্ষক শ্রেণিকক্ষ (Classroom)-এ প্রবেশ করার সাথে সাথে তাঁর ক্লাসে কিভাবে শিক্ষার্থীরা মনযোগী হবে, সে যোগ্যতা অর্জন করতে হবে। আধুনিক পাঠদান (Modern Teaching Method) পদ্ধতির মাধ্যমে সহজেই এ যোগ্যতা অর্জন করা সম্ভব।

  • যথাযথ নির্দেশনা দেওয়ার যোগ্যতা :   কোনো ব্যক্তির নির্দেশনা যদি যুক্তিসঙ্গত বা সঠিক হয় তবে সে নির্দেশনা মানতে বাধ্য থাকে নির্দেশনা প্রাপ্তরা। অনেক শিক্ষক আছেন, যাদের ক্লাস করতে আগ্রহী থাকে না শিক্ষার্থীরা, ঐই শিক্ষকের পড়া শিখে আসেনা, তাঁর ক্লাসের জন্য শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে যেসব শিক্ষা উপকরণ আনা দরকার(যেমন: বই খাতা ও অন্যান্য উপকরণ) সেগুলো শ্রেণিকক্ষ (Classroom)-এ আনতে চায় না, বাড়িতে দেওয়া কাজ করে আনেনা ইত্যাদি ইত্যাদি লক্ষ্য করা যায়। ফলে ঐ শিক্ষকের দ্বারা শ্রেণি ব্যবস্থাপনা (Class Management) বাস্তবায়ন সম্ভব হয় না। ঐ শিক্ষক আধুনিক পাঠদান পদ্ধতি অবলম্বন করে সহজেই শ্রেণি ব্যবস্থাপনা করতে পারেন। আর শ্রেণি ব্যবস্থাপনায় আধুনিক পাঠদান পদ্ধতি (Modern Teaching Methods in Class Management) এ যোগ্যতা অর্জনে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। 
  • যুগপোযোগী আধুনিক অংশগ্রহণমূলক অথবা সহযোগিতামূলক শিক্ষণ শেখানোর মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের কাঙ্ক্ষিত শিখনফল অর্জন করানোর যোগ্যতা:   শিক্ষার্থীরা বা সমাজের মানুষ কি বোঝে? একজন শিক্ষক, একজন ঈমাম, একজন ডাক্তার এই ধরনের মানুষেরা সব জানে সব পারে। তাই তাঁদেরকে সমাজের লোকেরা অন্য চোখে দেখে। দেখবেন, এই ধরনের ব্যক্তির মধ্যে যাদের আধুনিকতা ও সময়োপযোগী জ্ঞান আছে তাঁদেরকে খুব সম্মান করে। আর এর উল্টোদিকে এই সমস্ত মানুষের মধ্যে যদি স্মার্টনেস, জ্ঞান, আধুনিকতা না থাকে, তবে সমাজের মানুষ তাকে নিয়ে ব্যঙ্গ করে। তাই শ্রেণিকক্ষেও শিক্ষার্থীদের গ্রহণযোগ্যতা পেতে আধুনিক পাঠদান পদ্ধতি (Modern Teaching Methods) অবলম্বন করতে হবে। 
  • আই কন্টাক্ট (Eye Contact) এর মাধ্যমে পুরো শ্রেণিকক্ষ(Classroom)-কে দৃষ্টির শাসনে আনার যোগ্যতা:    আপনি মানুষ হিসেবে যদি আই কন্টাক্ট(Eye Contact) এর ব্যবহার জানেন তবে শিশু থেকে বৃদ্ধ সবাই আপনার আয়ত্বে থাকবে। সে পরিবার হোক বা অফিসিয়াল সদস্য হোক। সে কারনে শ্রেণি ব্যবস্থাপনায় (Class Management)  সফলতা পেতে আই কন্টাক্ট এর ব্যবহার খুবই কার্যকরী। বিশেষ করে বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থায় শারীরিক শাসন নিষিদ্ধ, তাই দৃষ্টির শাসন বা চোখের শাসনে শিক্ষক যদি শিক্ষার্থীদের কন্ট্রোল করতে না পারে তবে শিক্ষণ শেখানো কার্যক্রম ব্যহত হবে। বর্তমান শ্রেণি ব্যবস্থাপনায় আধুনিক পাঠদান পদ্ধতি (Modern Teaching Methods in Class Management)-তে Eye Contact গুরুত্বপূর্ণ।
  • শিক্ষার্থীদের আচরণ নিয়ন্ত্রণে এনে শিক্ষণ শেখানোর সুষ্ঠু পরিবেশ সৃষ্টি করার যোগ্যতা:   ভিন্ন ভিন্ন পরিবেশ থেকে আসা বিভিন্ন ধরনের শিক্ষার্থীদের আচরণ আলাদা হয়ে থাকে, সে কারনে শ্রেণি ব্যবস্থাপনায় (Class Management) শিক্ষককে প্রতিটি শিক্ষার্থীর আচরণ অনুযায়ী তাদের-কে ব্যবহার করতে হবে। না হলে ক্লাসরুম(Classroom)-এ শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় থাকবে না। 
  • শিক্ষার্থীদের সাথে বন্ধুসূলভ আচরণের মাধ্যমে লেখাপড়ার প্রতি আগ্রহ বৃদ্ধি ও নিজের গ্রহনযোগ্যতা তৈরির যোগ্যতা:   শিক্ষক যত শিক্ষার্থীদের কাছে যেতে পারবে ততই ঐই শিক্ষক, শিক্ষার্থী বা অভিভাবকের নিকট থেকে শ্রদ্ধা, ভালবাসা পাবে। সেই সাথে প্রাতিষ্ঠানিক গ্রহণযোগ্যতাও অর্জন করতে পারবে। শিক্ষার্থীরা ঐই শিক্ষকের ক্লাস বা প্রয়োজনীয় নির্দেশনা মানবে। আর এটা সম্ভব বন্ধুসূলভ আচরণ দ্বারা। আর একজন স্মার্ট শিক্ষকের শ্রেণি ব্যবস্থাপনায় আধুনিক পাঠদান পদ্ধতি (Modern Teaching Methods in Class Management) প্রয়োগে এই যোগ্যতা আবশ্যক। 
  • কম মেধা, দূর্বল মেধা বা পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীদের সুষম শিক্ষাদানের যোগ্যতা:   শ্রেণি ব্যবস্থাপনায় আধুনিক পাঠদান পদ্ধতি (Modern Teaching Methods in Class Management) প্রয়োগের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ যোগ্যতা এটি।  শুধু মেধাবী শিক্ষার্থীদের প্রতি সুনজর দিয়ে শিক্ষক যদি ক্লাস পরিচালনা করতে চান, তবে সুষম বন্টন করা হবে না। ফলে ঝরে পড়বে কম মেধা, দূর্বল মেধা বা পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীরা।  আধুনিক পাঠদান পদ্ধতিতে কম বা দূর্বল মেধার শিক্ষার্থীদের ব্যাপারে আলাদা নির্দেশনা রয়েছে।
  • প্রতিটি শিক্ষার্থীকে যার যার কার্য অনুযায়ী মূল্যায়ন করার যোগ্যতা:   ভাল কাজের জন্য প্রশংসা আর মন্দ কাজের জন্য তিরষ্কার করাও শ্রেণি ব্যবস্থাপনা (Class Management) -এর অন্যতম কৌশল। এতে শিক্ষকের উপর শিক্ষার্থীদের আস্থা ও শ্রদ্ধা বৃদ্ধি পায়। আধুনিক পাঠদান পদ্ধতি (Modern Teaching Method) অনুসরণ করলে শ্রেণি ব্যবস্থাপনায় এ যোগ্যতা অর্জন সহজ।
  • নিজস্ব ব্যক্তিত্ব রক্ষা করার যোগ্যতা:   শিক্ষককে যদি সুন্দর ও স্মার্ট লাগে তবে সব শিক্ষার্থীরা শিক্ষকের সুন্দরের প্রশংসা করে এবং ক্লাসে শিক্ষকের স্মার্টনেস দেখার জন্যও শিক্ষকের প্রতি মনোযোগী হয়। যেকোন ধরনের মানুষের জন্য স্ব-স্ব ব্যক্তিত্ব রক্ষা করা জরুরি। কারন একজন মানুষকে চাকুরির পদমর্যাদা বা চেয়ারের সম্মানে সম্মানিত করতে চায় খুব মানুষ। হয়তো লোক দেখানো চোখের সামনে করবে, কিন্তু ভেতরে ভেতরে কু-দৃষ্টিতে দেখবে। সত্যিকারের মর্যাদা পেতে ব্যক্তির রুচিশীল ব্যক্তিত্ব থাকতে হয়। যা কিনা সেই ব্যক্তির আচার-ব্যবহার, চলন-বলন, কথা-বার্তা, পোষাক-আষাকে ফুটে ওঠে। আর শিক্ষকের বেলায় ব্যক্তিত্ব থাকতে হবে এ কথা বলায় বাহুল্য। একজন রুচিশীল ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন শিক্ষকের জন্য শিক্ষার্থী, অভিভাবকরা খুব কাছের হয়ে যায়, যে কারনে তাঁর গ্রহনযোগ্যতা ও জনপ্রিয়তা হু হু করে বৃদ্ধি পেতে থাকে। তাই শ্রেণি ব্যবস্থাপনায় আধুনিক পাঠদান পদ্ধতি (Modern Teaching Methods in Class Management) প্রয়োগে এটিও অন্যতম যোগ্যতা। 
  • অভিভাবকদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে প্রাতিষ্ঠানিক সমন্বয় করার যোগ্যতা:   সাফল্যমন্ডিত শিক্ষা বাস্তবায়নের জন্য অভিভাবক হচ্ছে অপরিহার্য উপাদান। আমরা জানি, শিক্ষক, শিক্ষার্থী আর অভিভাবক এই ৩টি উপাদানের সমন্বয়ে সঠিক শিক্ষা কার্যক্রম সম্পাদন হয়ে থাকে। সে কারনে সঠিক শ্রেণি ব্যবস্থাপনার (Class Management) জন্য শিক্ষককে অবশ্যই এই যোগ্যতা অর্জন করতে হবে। এ যোগ্যতা অর্জনের জন্য আধুনিক পাঠদান পদ্ধতি (Modern Teaching Method)  সহায়ক ভূমিকা পালন করে।

তথ্য ও সংবাদ জানা এখন আর ফ্যাশন নয়, প্রাত্যহিক প্রয়োজন। যিনি শেখাবেন, যারা শিখবে তাদের সকলকেই প্রতিদিনের আঞ্চলিক, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক খবর ও আনুষঙ্গিক তথ্য জেনে রাখতে হবে। নিজেকে স্মার্ট, অভিজ্ঞ ও যোগ্য মানুষ হিসেবে গড়তে গেলে প্রতি মুহূর্তের খবরা-খবরের সাথে পরিচিত হয়ে ওঠার অভ্যাস তৈরি করতে হবে। পাশাপাশি প্রাকৃতিক পরিবেশ, যেমন: ভৌগলিক সীমারেখা, বিজ্ঞানের অভিযাত্রা এবং চিন্তার বিবর্তন বিষয়ে শিক্ষার্থীর মনোযোগ আকর্ষণ করতে হবে।

সম্মানিত পাঠক নিশ্চয় শ্রেণি ব্যবস্থাপনায় আধুনিক পাঠদান পদ্ধতি (Modern Teaching Method in Class Management) আর্টিকেলটি পড়ে কিছুটা হলেও উপকৃত হতে পেরেছেন। নিজে জেনে অন্যকে জানার সুযোগ করে দিন। পরামর্শ দিন কমেন্ট বক্সে। সাবস্ক্রাইব করে সাথে থাকুন এবং শেয়ার করুন যতটা সম্ভব।





লিখেছেন : মসনদ সাগর
 শিক্ষক, লেখক ও ফ্রিল্যান্সার, 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ