গ্যাস্ট্রিক রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার জানুন । Symptom and Remedies of Gastric Disease


পাঠকগণ, গ্যাস্ট্রিক নিয়ে তথ্যভিত্তিক আমার ২টি লেখা ‘সবার জন্য ব্লগ –sobar jonno blog’ এ প্রকাশিত হচ্ছে। একটি হচ্ছে  “গ্যাস্ট্রিক এর লক্ষণ ও প্রতিকার জানুন (Symptoms and Remedies of Gastric Disease)” অন্যটি  “ গ্যাস্ট্রিক থেকে চিরতরে মুক্তির প্রাকৃতিক উপায় (how to get rid of gastric naturally)” –যেখান থেকে জানতে পারবেন শুধুমাত্র আদা ও লেবু দিয়ে মাত্র কয়েকদিনেই কিভাবে গ্যাস্ট্রিক (Gastric) সমস্যা দূর করবেন সাথে করোনা থেকে বাঁচবেন, পেটের চর্বি বা মেদ ঝরাবেন  ত্বক ভাল রাখবেন

গ্যাস্ট্রিক রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার, প্রাকৃতিক উপায়ে গ্যাস্ট্রিক নিরাময়, ঘরোয়া পদ্ধতিতে গ্যাস্ট্রিক আলসার দূর করার উপায়, অ্যাসিডিটি দূর করার সহজ উপায়, বুক জ্বালা পোড়া দূর করুন প্রাকৃতিক উপায়ে, গ্যাস্ট্রিক দূর করার মেডিসিন বা ঔষধ, গ্যাস্ট্রিক দূর করার ঘরোয়া ও প্রাকৃতিক ঔষধ
গ্যাস্ট্রিকের লক্ষণ ও প্রতিকার


গ্যাস্ট্রিক রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার জানুন (Symptoms and Remedies of Gastric Disease)

         
প্রথমেই জানা যাক, গ্যাস্ট্রিক রোগ কি (What is Gastric)

গ্যাস্ট্রিক(Gastric) শব্দের আভিধানিক অর্থ হচ্ছে অম্ল। আমি অনলাইনে অনেক লেখা বা ভিডিও দেখে এবং বিভিন্ন ডাক্তারের মাধ্যমে জেনে নিশ্চিত হতে পারলাম যে, গ্যাস্ট্রিক (Gastric) বলে কোনো রোগ আমাদের শরীরে হয় না বা এ নামে রোগ নেই। তাহলে কেন আমরা গ্যাস্ট্রিক গ্যাস্ট্রিক বলে অস্থির হই আর কেনই বা বাজারে এত ঔষধ? হ্যাঁ, এ সবই আমরা নিজেরাই তৈরি করে ফেলেছি। যার কারনে এখন গ্যাস্ট্রিক (Gastric)-কে স্বাভাবিক রোগ বলে মনে হয়। আমরা যে খারাব খাই সেটা প্রথমে পাকস্থলিতে জমা হয় যার ইংরেজি শব্দ Stomach. এই পাকস্থলিতে হাইড্রোক্লোরিক নামে এক ধরনের এসিড তৈরি হয়, যা আমাদের খাদ্য হজমে সহায়তা করে। এই এসিডের কিছু অংশ গ্যাস আকারে পাকস্থলির উপরিভাগে থাকে। আর এই গ্যাস কোনো কোনো সময় অতিরিক্ত হয়ে গেলে তা খাদ্যনালীতে প্রবেশ করে মুখ দিয়ে বের হয়, তখন আমরা ঢেকুর তুলি যাকে বলে থাকি চুকা ঢেক। যেহেতু এই গ্যাস এসিড আকারের তাই তখন খাদ্যনালী জ্বালাপোড়া করে, এবং আমরা বুক জ্বলা অনুভব করি। খেয়াল করে দেখবেন, সে সময় পাকস্থালি কিন্তু জ্বালাপোড়া করে না। কারন পাকস্থলিতে এক ধরনের আবরণ আছে যা এই এসিডের ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে। আমাদের জীবন ব্যবস্থায় অধিক অনিয়মের ফলে যেমন: খাদ্যগ্রহণ, চলাফেরা ইত্যাদি ব্যতিক্রমের ফলে আমাদের পাকস্থলিতে অতিরিক্ত গ্যাস হয় আর এই গ্যাস নির্গত হতে বা নির্গত না হতে পেরে বুকে জ্বালা, পেট ব্যথা, নাভী ব্যথা, বমি বমি ভাব, মাথা ঘোরানো, ঘাড় ব্যথা ইত্যাদি অনুভব হয়। এটাকেই আমরা গ্যাস্ট্রিক (Gastric) রোগ বলে থাকি। আমরা এ রোগ সারাতে বাজার থেকে গ্যাস্ট্রিক(Gastric) নামের ঔধধ কিনে ভুরিভুরি খাচ্ছি আর আলসার হওয়াসহ কিডনীর ক্ষতি ডেকে আনছি। 
আমাদের বুঝতে হবে শরীর একটি যন্ত্র। আর এই যন্ত্রকে নিয়মতান্ত্রিক পরিচালনা করতে হয়। শরীরের যন্ত্রপাতিকে সঠিক ব্যবহার না করলে ব্যতয় ঘটবে এটাই স্বাভাবিক আর ব্যতয় হলে নানান সমস্যা দেখা দিবে এটা বুঝতে বিশেষজ্ঞ হওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। আর শারীরিক যন্ত্রপাতি ঠিক রাখার প্রধান উপায় সঠিক খাবার গ্রহণ। পাকস্থলি ঠিকমতো কার্য সম্পাদন করলে আপনার সমস্ত কিছু ঠিক থাকবে।

আমরা যারা অনিয়মের ফলে গ্যাস্ট্রিক (Gastric) নামের বিধান বহির্ভূত রোগে আক্রান্ত হয়ে গেছি, এবং বাজার থেকে নিয়মিত কিনে গ্যাস্ট্রিক (Gastric) ট্যাবলেট সেবন করছি, তাদের জ্ঞাতার্থে বলছি, আসলে এ ঔষধ সাময়িক শান্তনা মাত্র, যা কিনা অন্যসব রোগের আহবায়কও হিসেবে কাজ করে। তাই জেনে রাখা দরকার “গ্যাস্ট্রিক রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার (Gastric Symptoms and Remedies)” 



গ্যাস্ট্রিক (Gastric) রোগের লক্ষণ :  

অতিরিক্ত গ্যাস তথা গ্যাস্ট্রিক (Gastric) বৃদ্ধির কারনে বিভিন্ন লক্ষণ দেখা দেয় যথা- বুক জ্বালাপোড়া, পেটের উপরের অংশে ব্যথা বা জ্বালা পোড়া, পেট ফাঁপা, টক ঢেঁকুর, গ্যাস, বমিভাব, মুখে দুর্গন্ধ, ক্ষুধামন্দা, অল্প খেলেই ভরপেট অনুভব, ওজন হ্রাস, পিঠে ও বুকে ব্যথা ইত্যাদি লক্ষণ প্রকাশ পায়। 

এখন সুনির্দিষ্টভাবে জেনে নিব কি কি কারণে গ্যাস্ট্রিক (Gastric) এর অসুবিধা হয়

  • খাদ্য অভ্যাস : পেটে অতিরিক্ত গ্যাস তথা গ্যাস্ট্রিক(Gastric) হওয়ার অন্যতম প্রধান কারন খাদ্যভ্যাস। আমরা যখন তখন যা কিছু মনে চায় খেয়ে ফেলি। 
  • পানি পানে অবহেলা : সৃষ্টিকর্তার অশেষ রহমত পানি। কোনো ডাক্তার এমন কোনো রোগের জন্য পানি খেতে নিষেধ করেছেন, নিশ্চয় শোনেন নি। পানি পৃথিবীর সকল প্রাণির জন্য প্রধান উপাদেয়, যা প্রাণিদেহ-কে সম্পূর্ণ সূস্থ্য রাখে। 
  • মানসিক অশান্তি : নিয়মিত মানসিক অশান্তিতে যারা ভোগেন, তাদের অতিরিক্ত গ্যাসের তথা গ্যাস্ট্রিক(Gastric) সমস্যা বেশি হয়। এক্সাইটি, স্ট্রেস, মানসিক কষ্ট, টেনশন, কষ্ট বা আঘাত এ রোগের কারন হতে পারে। 
  • ধূমপান : ধূমপান গ্যাস বৃদ্ধি তথা গ্যাস্ট্রিক(Gastric) রোগের অন্যতম কারন। যারা ধূমপানে অভ্যস্ত তাদের এসিডিটি বৃদ্ধিসহ লিভার ফাংশনে ক্ষতের সৃষ্টি করে। 
  • ঘূম : একজন মানুষের শারীরিক সূস্থ্যতার নিয়মিত ও পরিমিত ঘুম দরকার অনিয়মিত ঘুমের অভ্যাস এসিডিটি তথা গ্যাস্ট্রিক(Gastric) বৃদ্ধিসহ নানান রোগের জটিলতা সৃষ্টি করে। 
  • খাবারের আসন : খাবারের জন্য আসন একটি গুরুত্বপূর্ণ। শারীরিক বিধান মতে আসন ব্যবস্থা করুন। 
  • কথা বলার বদ্যাভ্যাস : খাবারের সময় কথা বলার কারণে এসিডিটির তথা গ্যাস্ট্রিক(Gastric) সমস্যা হয়ে থাকে। 
  • শারীরিক ব্যায়াম : শারীরিক ব্যায়াম অথবা নিয়মিত না হাঁটার কারনেও এসিডিটি তথা গ্যাস্ট্রিক(Gastric) বৃদ্ধি পেয়ে থাকে। 

এসিডিটি তথা গ্যাস্ট্রিক (Gastric) থেকে প্রতিকার পেতে কিছু অভ্যাসগত নিয়মনীতি পালন করতে হবে। যেমন: 

গ্যাস্ট্রিক রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার, প্রাকৃতিক উপায়ে গ্যাস্ট্রিক নিরাময়, ঘরোয়া পদ্ধতিতে গ্যাস্ট্রিক আলসার দূর করার উপায়, অ্যাসিডিটি দূর করার সহজ উপায়, বুক জ্বালা পোড়া দূর করুন প্রাকৃতিক উপায়ে, গ্যাস্ট্রিক দূর করার মেডিসিন বা ঔষধ, গ্যাস্ট্রিক দূর করার ঘরোয়া ও প্রাকৃতিক ঔষধ
গ্যাস্ট্রিকের লক্ষণ ও প্রতিকার


  • রুটিন মাফিক প্রতিদিন একই সময়ে খাবার খেতে হবে। অতিরিক্ত খাবার খাবেন না। সারাদিন না খেয়ে একবারে অনেক খেয়ে ফেললে নিশ্চিতভাবে আপনি মারাত্মক গ্যাসের তথা গ্যাস্ট্রিক (Gastric) সমস্যায় ভুগবেন। কখনই পেট ভর্তি করে খাবেন না। নিয়ম হলো পুরো পেটের ৩ ভাগের এক ভাগ খাবার খাওয়া। খাবার ভালভাবে চিবিয়ে খেতে হবে। রাতে শোয়ার কমপক্ষে ১-২ ঘন্টা পূর্বে খাদ্য গ্রহণ করতে হবে। এতে করে অতিরিক্ত মেদ বা চর্বি হওয়ার হাত থেকেও রক্ষা পাবেন। 
  • শরীরের গ্যাস তথা গ্যাস্ট্রিক (Gastric) সমস্যা থেকে মুক্ত থাকতে পর্যাপ্ত পানি পান করুন। পানিতে কোনো ক্যালরী নেই। প্রতিদিন কমপক্ষে ২-৩ লিটার পানি পান করা আবশ্যক। খাবারের মাঝখানে পানি পান করা থেকে বিরত থাকুন। খাবারের পূর্বে পানি পান করুন অথবা খাবার শেষ করে পান করুন। সবচেয়ে ভাল হয় খাবারের কিছুক্ষণ পর পানি পান করা। 
  • যতটা সম্ভব স্ট্রেস বা টেনশনমুক্ত থাকার চেষ্টা করুন। নিজে নিজে ভেবে দেখবেন, আসলে টেনশন বা চাপ নিয়ে কি হয়? বরং টেনশন বাড়ে আর শরীরে রোগ জন্ম নেয়। তাই সমস্যা সমাধানের চিন্তা করুন। 
  • একেবারে ধূমপান পরিহার করুন। তামাকজাত দ্রব্য থেকে দূরে থাকুন। যারা ধূমপানের নেশায় বুদ, তাদের জন্য পরামর্শ একবারে না পারেন বিভিন্ন কৌশল করে ধীরে ধীরে এ নেশা ছেড়ে দিন। তাহলে এসিডিটি তথা গ্যাস্ট্রিক (Gastric) সমস্যা থেকে মুক্ত থাকবেন। 
  • নিয়মিত ও পরিমিত ঘুমের অভ্যাস গড়ে তুলুন। বিশেষ করে রাত জাগা থেকে বিরত থাকুন। আপনার এসিডিটি তথা গ্যাস্ট্রিক (Gastric) বাড়বে না। 
  • আমরা বেশি উচ্চাভিলাষীর কারণে খাবারের সময় দামীদামী ডাইনিং টেবিল ব্যবহার করি। মূলতঃ খাবারের জন্য চেয়ার নয় বরং সমান জায়গা ব্যবহার করতে হয়। দুই হাঁটু ভাজ করে বসে খাবার গ্রহণ করতে হবে। এই অভ্যাস গড়ুন, এসিডিটি তথা গ্যাস্ট্রিক (Gastric) সমস্যায় ভূগবেন না। 
  • যখন খেতে বসবেন, খাবারের দিকে মনোযোগী হয়ে খেয়ে উঠুন। কথা বলা থেকে বিরত থাকুন। খাবারের সময় কথা বললে এসিডিটি তথা গ্যাস্ট্রিক (Gastric) সমস্যা ছাড়াও নানান সমস্যায় পড়তে পারেন। 
  • ব্যস্ত জীবনে সবাই ব্যস্ত। তবুও রুটিন অনুযায়ী খাবার গ্রহনের সাথে নিয়মিত ব্যায়াম করুন। একদমই সম্ভব না হলে অন্ততঃ কিছু সময় হাঁটার অভ্যাস করুন। 
যত্রতত্র রাস্তার খোলা খাবার ও ভাজাপোড়া খাবার পরিহার করুন আর গ্যাস্ট্রিক তথা গ্যাস্ট্রিক (Gastric) মুক্ত জীবন গড়ুন। 

মনে রাখতে হবে আজকের সামান্য এসিডিটি তথা গ্যাস্ট্রিক(Gastric)সমস্যা আগামীতে রূপ নিতে পারে পেপটিক আলসার, গ্যাস্ট্রিক আলসার বা পাকস্থালীর ক্যান্সারের মত জটিল রোগে। তাই কিছু সহজ নিয়ম মেনে সুস্থ ও সুন্দর জীবনযাপন করুন। কারো এসিডিটি তথা গ্যাস্ট্রিক(Gastric) সিম্পটম দেখা দিলে ফার্মেসী থেকে নিজের ইচ্ছা মতো ঔষুধ না খেয়ে আসলে কি রোগ হয়েছে তা ডাক্তার দেখিয়ে রোগ নির্নয় করে প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া উচিৎ। 

আশা করি “গ্যাস্ট্রিক এর লক্ষণ ও প্রতিকার (Gastric Symptoms and Remedies)” সম্বন্ধে ব্যাখ্যা উপস্থাপন করতে পেরেছি। 





মন্তব্য, পরামর্শ লিখুন কমেন্ট বক্সে। নিজে জানুন এবং শেয়ার করে অন্যকে জানার সুযোগ করে দিন। 



লেখক : মসনদ সাগর
  শিক্ষক, লেখক, গবেষক ও ফ্রিল্যান্সার, 
  by- sobar jonno blog –সবার জন্য ব্লগ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ