শিক্ষক শিক্ষার্থী সম্পর্কে লেখাপড়ার প্রভাব ও বাস্তবতা | Effects and realities of learning about teachers and students

 

আস্-সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ্!

সবার জন্য ব্লগ –এর শিক্ষা বিভাগে আজ থাকছে স্কুল কলেজে শিক্ষক শিক্ষার্থীর সম্পর্ক নিয়ে আর্টিকেল-

শিক্ষক শিক্ষার্থী সম্পর্কে পড়ালেখার প্রভাব বাস্তবতা

শিক্ষক, শিক্ষার্থী, শিক্ষার্থী ও শিক্ষকের সম্পর্ক, কেমন হবে  শিক্ষার্থী ও শিক্ষকের সম্পর্ক, শিক্ষার্থী ও শিক্ষকের সম্পর্ক যেমন হলে লেখাপড়ার মান বাড়ে, শিক্ষক সবসময় গুরু, শিক্ষার্থী সবসময় শিষ্য, শিক্ষক শিক্ষার্থীর সম্পর্কে লেখাপড়ার প্রভাব, শিক্ষক শিক্ষার্থীর সম্পর্কের কৌশল, স্কুল কলেজে শিক্ষক শিক্ষার্থীর সম্পর্ক ও বাস্তবতা, বর্তমানে শিক্ষক শিক্ষার্থীর সম্পর্ক, শিক্ষকের সাথে শিক্ষার্থীর খারাপ আচরণ, শিক্ষকদের সমাজে অবহেলা অপমান । Teacher, student, student and teacher relationship, what will be the relationship between student and teacher, student and teacher relationship will increase the quality of education, teacher is always teacher, student is always student, effect of education on teacher student, teacher student relationship strategy, teacher student relationship in school college And the reality, currently teacher-student relationship, bad behavior of students with teachers, neglect and humiliation of teachers in the society
শিক্ষক শিক্ষার্থী সম্পর্কে লেখাপড়ার প্রভাব ও বাস্তবতা

শিক্ষক কী:

শিক্ষাগুরুর মর্যাদা’ কবিতার আলোকে বাদশাহ আলমগীরের কথা উল্লেখ করলে সহজেই বোঝা যায় যে- এই পৃথিবীতে সবচেয়ে মর্যাদাবান ব্যক্তি হচ্ছেন শিক্ষক। পুস্তকের আলোকে সংগায়িত করলে, শিক্ষক হচ্ছেন তিনি, যিনি একজন শিক্ষার্থীকে নৈতিক আদর্শে গড়ে তুলে তার ভবিষ্যৎ আলোকিত করে দেন। জাতি গঠনের কারিগর হিসেবে একজন দুইজন করে করে অনেক সুনিপুন কারিগর গড়ে দেশ ও জাতিকে সমৃদ্ধ করা।

অতএব, একজন শিক্ষক হচ্ছেন প্রতিটি শিক্ষার্থীর কাছে মডেল স্বরুপ; যে মডেলকে অনুসরণ করে শিক্ষার্থী হয়ে উঠবে হাজার শিক্ষার্থীর মডেল।

সবধরনের শিক্ষামূলক আর্টিকেল পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

শিক্ষার্থী কী:

শিক্ষার্থী হচ্ছে সেই উপাদান, যে উপাদানকে কাজে লাগিয়ে শিক্ষক তার সমাজ, জাতি, দেশকে নির্মাণ করে থাকেন। একজন গুরুর নিকট শিষ্য যেমন ঠিক শিক্ষকের নিকট শিক্ষার্থীও তেমন। অবহেলিত বঞ্চিত কিংবা মধ্যবিত্ত, ধনী শ্রেণির যেমনই হোক না কেনো, শিক্ষকের নিকট সবাই সমান শ্রেণির সন্তান। উঁচু নিচু ভেদাভেদ ভুলে শিক্ষক তাঁর সন্তানদেরকে আদর্শবান হিসেবে গড়ে তোলার জন্য যে যে নির্দেশ/ নির্দেশসমূহ দিবেন তার সবকিছুই বিনা দ্বিধায় পালন করার উপাদানের নামই শিক্ষার্থী।

বর্তমানে শিক্ষক শিক্ষার্থীর সম্পর্ক ও আধুনিক বাস্তবতা:

আমার সন্তানকে ফুলের টোকা কখনও দিইনি আর আপনি ধমক দেন, গায়ে হাত তোলেন, ভয় দেখান ---বর্তমান অভিভাবক (সবাই না)।

টাকা আয় করে নিজে ভালো থাকতে হবে, কিসের ঠেকা পড়ছে অন্যের সন্তান মানুষ করার, অযথা কেনো রিস্ক নেবো, মাস শেষে বেতনতো পাবোই, সুন্দরী মেয়ে শিক্ষার্থীর দিকে লোলুপ দৃষ্টি ---বর্তমান শিক্ষক (সবাই না)।

উপরের কথাগুলো বলার কারণ নিশ্চয় বুঝে গেছেন। শিক্ষক শিক্ষার্থীর সম্পর্ক যেমন হওয়া উচিৎ, বর্তমান বাস্তবতায় তার ধারে কাছেও নেই। এর জন্য নিশ্চয় অন্য গ্রহের অন্য কোনো প্রাণি দায়ী নয়, অবশ্যই আমরা দায়ী। আগে যখন পড়ালেখার জন্য অভিভাবক বিদ্যালয়ে দিতেন, স্পষ্ট বলে দিতেন – হাড্ডি আমার আর মাংস আপনাদের, প্রয়োজনে হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে আমাকে খবর দিবেন। আর বর্তমানতো উপরে বলেই দিলাম। আগে রাষ্ট্রীয়ভাবে শাসন, শাসন আর শাসন ছিলো, বর্তমানে আমাদের মতো অভিভাবকদের জন্য রাষ্ট্রীয়ভাবে বেত, শাসন নিষিদ্ধ করা হয়েছে। পূর্বেই বললাম এর জন্য মোটেও অন্য কেউ দায়ী নয়, শতভাগ আমরা। আগে শিক্ষক দেখলে শিক্ষার্থী এবং তার অভিভাবকগণ কত সম্মান করতো তা বলে শেষ করা যাবে না। এখন শিক্ষকদেরকে সমাজে হেয় করে দেখা হয়। মসকরা করে বলে মাস্টোর, চাকরি না  পেয়ে শিক্ষকতা করে। এ সমাজে শিক্ষকতাকে অঘোষিত বেকার বলা হয়।

সবধরনের শিক্ষামূলক আর্টিকেল পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

অন্যদিকে, কিছু শিক্ষকের নৈতিকতা হারানো, বাণিজ্যিক মনোভাব, কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বাণিজ্যিক মনোভাবের দরুণ শিক্ষকদের সমাজে কোনো দাম নেই। মূল শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে শিক্ষকতা পেশায় খুব কম আসছে। কিছু নৈতিকতা বিরোধী মানুষ নামধারী শিক্ষক হয়ে শিক্ষকত পেশাকে কলুষিত করে দিয়েছে বা দিচ্ছে।

বর্তমানে আমরা মা-বাবা ভুলে গেছি সন্তানদের সাথে বা তাদের সামনে কী বলা দরকার, কী করা দরকার বা দরকার না। মিথ্যা, বানোয়াটি, ভন্ডামী নিজে করি এবং সন্তানদেরকেও শেখায় কোনো কিছুর তোয়াক্কা না করে। সন্তান যদি বলে স্যার আমাকে বকা দিছে বা শাসন করছে, আমরা সন্তানের সামনে শিক্ষককে হেয় করি, কোনো কোনো ক্ষেত্রে সন্তানকে সাথে নিয়ে আরো দু’চার জনকে নিয়ে শিক্ষকের বিচার করে ফেলি, ফলে ঐ সন্তান যা নষ্ট হবার হয়ে যাচ্ছে। সবকিছু মিলিয়ে ঘোলাটে পরিবেশে শিক্ষক শিক্ষার্থীর সম্পর্ক গুরু শিষ্যের জায়গায় নেই।

মা-বাবা শুধু সন্তান জন্ম দিতে পারেন যদি রাব্বুল আল-আমিন দেন। তাছাড়া সন্তানের জীবন গড়ে ওঠার ক্ষেত্রে প্রধান ভূমিকা রাখেন বিদ্যালয়ের শিক্ষক। কথা বলার পর থেকে বাচ্চার মন মেজাজ বুঝে অনেক ধৈর্য ধরে একজন শিক্ষক শিক্ষার্থীর সুন্দর ভবিষ্যত গড়ার জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করে যান। তার বিনিময়ে কী পান এ সমাজে? সে বিষয় যার যার বিবেকের কাছেই থাক। তাই একান্ত উচিৎ অভিভাবক হিসেবে সন্তানের মাধ্যমে সঠিক সম্মান দেওয়া ও শিক্ষক হিসেবে সঠিক দায়িত্ব পালন করে সন্তানতুল্য শিক্ষার্থীদের প্রতি সঠিক মূল্যায়নের মাধ্যমে শিক্ষক শিক্ষার্থীদের সম্পর্ক নিবিড় করা সময়ের দাবী।

শিক্ষক শিক্ষার্থী সম্পর্ক ঠিক রাখতে শ্রেণিকক্ষে শিক্ষকের অবশ্যই যেসকল দায়ত্বি পালন করা উচিৎ তা নিম্নরুপ:

# উঁচু নিচু, ধনী গরিব সবাইকে সমান চোখে দেখা।

# বাণিজ্যিক চিন্তা ভাবনা থেকে নিজেকে সরিয়ে শ্রেণিতে শিক্ষাদান।

# প্রাইভেট টিউশনির কারণে নৈতিকতা বিকিয়ে অসৎ উপায় থেকে সরে আসা।

# পরীক্ষার খাতায় নম্বর প্রদানের ক্ষেত্রে অবশ্যই নিরপেক্ষ থাকা।

# বন্ধুসূলভ আচরণের মাধ্যমে শিক্ষার্থীকে আপন করে নেওয়া।

# এমন আচরণ না করা যেনো শিক্ষার্থী আতংকিত হয়ে যায়।

# শৃংখলা বজায় রেখে যথাযথ শাসন করা।

# শিক্ষার্থী প্রশ্ন করলে ধমক না দিয়ে বুঝিয়ে দেওয়া।

# শুধু সবল মেধাবী শিক্ষার্থীদের দিকে মনোযোগী না হয়ে কম মেধার শিক্ষার্থীদেরও গুরুত্ব দেওয়া।

# শিক্ষককে বুঝতে হবে প্রতিটি শিক্ষার্থী তাঁর কাছে আমানত এবং এই আমানত রক্ষা করা পবিত্র ও নৈতিক দায়িত্ব।

# সর্বদা হাসি মুখে কথা বলা।

সবধরনের শিক্ষামূলক আর্টিকেল পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

পরিশেষে বলবো, শিক্ষক এমন ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন হতে হবে যেনো শিক্ষার্থী ভয়ও পাবে আবার সেই শিক্ষকের ক্লাস বা যে কোনো নির্দেশনা মজা করে উপলব্ধি করবে এবং পালন করবে।

শিক্ষক যদি সর্বদা মনে রাখে ‘বিশ্ব জোড়া পাঠশালা মোর সবার আমি ছাত্র’, তাহলে সেই শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর সম্পর্ক নেতিবাচক হতে পারে না।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ