প্রতিটি মানুষের জীবনেই বহুবার দুঃশ্চিন্তা ও মানসিক চাপের (Worries and Stress) সম্মূখীন হতে হয়, ইচ্ছে করলেই এটা থেকে মুক্তি পাওয়া সহজ হয় না। কারণ কখন কোন্ বিপদ বা অসুবিধা সামনে হাজির হবে, সেটা আমাদের অজানা। তাই স্বাভাবিক জীবনযাপনের রুটিনে যদি অস্বাভাবিক কিছু ঘটে যায় বা ঘটার সম্ভবনা দেখা দেয়, তাহলে আমরা দুঃশ্চিন্তা ও মানসিক চাপে (Worries and Stress) পড়ে যায়। আর এটা জীবন চলার পথের খুবই স্বাভাবিক একটা চলমান ঘটনা। আপনাকে আমৃত্য এটাকে মাথায় নিয়েই চলতে হবে।
আস্-সালামু আলাইকুম ওয়া
রাহমাতুল্লাহ!
সূস্থ্য ও ভাল আছেন সবাইকে
নিয়ে আশা রেখে শুরু করছি আজকের বিষয়।
আজ লিখছি, “দুঃশ্চিন্তা ও মানসিক চাপ মুক্ত থাকবেন কিভাবে (The Way to Stay free of Worries and Stress)”
![]() |
দুঃশ্চিন্তা ও মানসিক চাপ মুক্ত থাকবেন যেভাবে । The Way to Stay free of Worries and Stress |
ইসলামিক ও শিক্ষামূলক গল্প উপন্যাস পড়ুন এখানে
আরো পড়ুন : লাল আটার পুষ্টিগুণ ও স্বাস্থ্য উপকারিতা
তবে হ্যাঁ, এটাকে সরানো বা কন্ট্রোল করা
সম্ভব। নিচে আমি ২টি ধাপে দুঃশ্চিন্তা ও মানসিক চাপ (Worries and Stress) থেকে
মুক্ত থাকার উপায় ব্যাখ্যা করব। আপনি মেনে চললে অবশ্যই মুক্ত থাকতে পারবেন।
প্রথমটি হচ্ছে : জীবনধারায়
পরিবর্তন এনে।
দ্বিতীয় হচ্ছে : খাদ্য গ্রহণ
বা খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করে।
দুঃশ্চিন্তা ও মানসিক চাপ কি (What is Worries and Stress) :
জীবন চলার পথে পারিবারিক,
সামাজিক, ব্যক্তিগত, অফিসিয়াল, অসুখ-বিসুখ ইত্যাদি যখন স্বাভাবিক মানসিকতাকে
অস্বাভাবিক করে তোলে, যা রাতের ঘুম কেড়ে নেওয়ার মত উপক্রমে পরিণত করে, তাকেই
দুঃশ্চিন্তা ও মানসিক চাপ (Worries and Stress) বলা হয়। মাঝে মাঝে নিজের বেহিসেবি
কাজকর্ম ও অনাকাঙ্ক্ষিত সামাজিক হুমকিও এই অবস্থার অন্যতম কারণ।
আসুন জেনে নিই “দুঃশ্চিন্তা ও মানসিক চাপ মুক্ত থাকবেন কিভাবে (The Way to Stay free of Worries and Stress)”
প্রথমত,
জীবনধারায় পরিবর্তন এনে :
১। ইতিবাচক বা পজেটিভ মানসিকতা গড়ে তুলুন : আমরা অনেকেই আছি, সামান্য
কোনো ব্যাপার ঘটলেই দুমড়ে মুষড়ে পড়ি। একটু যদি ভেবে দেখেন, আসলেই বিষয়টি নিয়ে
দুঃশ্চিন্তা ও মানসিক চাপ (Worries and Stress) নেওয়ার প্রয়োজন আছে কি না? আর থাকলেও
কতটুকু, সেটুকু সামাল দিতে কি কি করতে হবে? ব্যস, আপনি নিমিষেই হাজার মণ পাথর মাথা
থেকে সরিয়ে নিতে পারবেন। কিছু ঘটলে একা একা ভেবে ভেবে অস্থির না হয়ে শেয়ার করুন
প্রয়োজনীয় ব্যক্তি বা ব্যক্তিদের সাথে। দেখবেন, আসলে কিছুই না। আরও ভাবতে শিখুন যা
হবার হয়ে গেছে, এসব জীবন চলার পথে হবেই, যেহেতু ঘটে গেছে, এটাকে কীভাবে সমাধান করা
যায়, সে পথে হাঁটুন। অর্থ্যাৎ আমি বলতে চাইছি, বাস্তবতাকে শক্তভাবে মেনে নিতে
শিখুন। যা ঘটে গেছে তা নিয়ে ভেবে আসলে কিছু লাভ হয় না, শুধু নিজের শরীর ক্ষয় হয়।
সেজন্য যত দ্রুত পারেন সেটাকে জীবনের একটা অংশ ভেবে গুরুত্বহীন করে ফেলেন, দেখবেন
সামনে আর দুঃশ্চিন্তা ও মানসিক চাপ (Worries and Stress) আপনাকে স্পর্শ করতে পারবে
না।
ইসলামিক ও শিক্ষামূলক গল্প উপন্যাস পড়ুন এখানে
আরো পড়ুন : লাল আটার পুষ্টিগুণ ও স্বাস্থ্য উপকারিতা
২। পরিকল্পিত জীবন গড়ে তুলুন : এলোমেলো জীবন নয়, আপনার লাইফের প্রতিটি
ক্ষেত্রে প্রতিটি বিষয় গুছিয়ে নিন। প্রত্যেকদিনের জন্য রুটিন তৈরি করুন এবং রুটিন
মেনে কাজ করুন। তাহলে দেখবেন, দুঃশ্চিন্তা ও মানসিক চাপ (Worries and Stress) কাছে
ভিড়বে না। মানসিক প্রশান্তিতে থাকবেন। কারণ, রুটিন করে কাজ না করলে মাথার উপর অল্প
কাজের বড় বোঝা চেপে থাকে।
৩। ‘না’ বলার অভ্যেস গড়ুন : কাজ আছে বলে করতেই থাকছেন, এমনটা করবেন না।
সময় অনুযায়ী কাজ ভাগ করে নিন এবং রুটিনের ফাঁকা সময়টাতে কোনো কাজই হাতে নিবেন না।
প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হোন যে এই সময়টা রেস্ট বা কাজবিহীন কাটাব। সেই সাথে অপ্রয়োজনীয় কাজ
ছেটে ফেলুন। এভাবে ‘না’ বলুন, দুঃশ্চিন্তা ও মানসিক চাপ (Worries and Stress) থেকে
ভাল থাকবেন।
৪। বড় বড় নিঃশ্বাস নিন : দুঃশ্চিন্তা ও মানসিক চাপ (Worries and Stress)
মুক্ত থাকতে ভীষণ কার্যকরী পন্থা এটি। যখনই আপানাকে হতাশায় চেপে ধরবে, তখনই
নিঃশ্বাস টেনে বড় করে গভীরভাবে ছাড়ুন। বুকের পাজর বড় করে এভাবে নিঃশ্বাস নিন এবং
ছাড়ুন কয়েকবার, সাথে সাথেই চাপ কমে যাবে।
৫। সময়মত ঘুমাতে যান : মানুষের শরীরের সবচেয়ে কার্যকরী মেডিসিন
পরিমিতভাবে নিয়মিত ঘুম। আপনি দুঃশ্চিন্তা ও মানসিক চাপ (Worries and Stress) এ
থাকলে, যত দ্রুত সম্ভব বিছানায় চলে যান। ওসব কিছু না, পরে দেখা যাবে এমনটা ভেবে
ঘুমে যান। ভাল কাজ দেবে। কারণ যতক্ষণ জেগে থাকবেন, ততক্ষণই চিন্তা আরো বেড়ে যাবে।
৬। ব্যায়াম করার অভ্যেস করুন : দুঃশ্চিন্তা ও মানসিক চাপ (Worries and
Stress) মুক্ত থাকার অন্যতম উপায় নিয়মিত অল্প স্বল্প ব্যায়াম করা। সেটা হোক হাঁটা
বা যোগ ব্যায়াম। সকালে উঠে প্রার্থনা শেষে বেরিয়ে পড়ুন বাইরে। কিছু সময় হাটুন বা
যোগ ব্যায়াম করুন। শরীর যেমন ভাল থাকবে তেমনি আপনার মানসিক চাপও সরে যাবে।
৭। নিজেই খুঁজুন মুক্তির পথ : দুঃশ্চিন্তা ও মানসিক চাপ (Worries and
Stress) জীবনের স্বাভাবিক ঘটনা ভেবে, সে সময় নিজেকে বিভিন্ন শিক্ষামূলক বা
বিনোদনমূলক অনুষ্ঠানে জড়িয়ে নিন। গান বাজনা, নৃত্য, হাসির নাটক সিনেমা বা স্ত্রীকে
নিয়ে বাইরে কোথাও বেরিয়ে পড়ুন। একদম ফ্রি হয়ে যাবেন।
আরো পড়ুন : লাল আটার পুষ্টিগুণ ও স্বাস্থ্য উপকারিতা
৮। মেডিটেশন করুন : খুবই ব্যস্ত আপনি, মেনে নিলাম। তারপরও বলবো, দিনে
অন্ততঃ ১৫ থেকে ২৫ মিনিট ব্যয় করুন মেডিটেশনে। একদমই নিরিবিলি পরিবেশে আপনি যখন
নিজের মনের প্রতি মনোযোগী হবেন বা শ্বাস প্রশ্বাসের নিয়ম ফলো করবেন, আপনি
দুঃশ্চিন্তা ও মানসিক চাপ (Worries and Stress) মুক্ত থাকবেন।
৯। বিরতি নিন : আপনি যদি অফিসে থাকেন তবে, লাঞ্চের সময় নিজের ডেস্ক ছেড়ে
অন্যখানে লাঞ্চে বসুন। নামাজ পড়তে মসজিদে যান। কাজের বিরতি দিয়ে কিছু সময়ের জন্য
গান শুনুন বা কলিকদের সাথে গল্প করুন। স্ট্রেস কমবে এবং ভাল লাগবে।
১০। ফোন ও ইন্টারনেট ব্যবহার কমিয়ে দিন : আপনি হয়তো কিছু সময়ের জন্য
দুঃশ্চিন্তা ও মানসিক চাপে (Worries and Stress) ভূগছেন, এ সময়টাতে আগের তুলনায়
ফোন ব্যবহার ও ইন্টারনেট ঘাটাঘাটি ভালভাবেই কমিয়ে দিন। কারণ, কাজের সাথে এই
ব্যবহার আরো ব্রেইনে মানসিক চাপ বাড়িয়ে থাকে।
দ্বিতীয়ত, খাদ্য গ্রহণ বা খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করে :
· দুঃশ্চিন্তা
ও মানসিক চাপ (Worries and Stress) কমাতে অল্প পরিমাণ চিনি খান। কারণ চিনি আমাদের মস্তিষ্কের
উদ্দীপ্ত পেশীগুলোকে শিথিল করে থাকে। তবে বেশি খাওয়া যাবে না।
· চিনির
বিকল্প হিসেবে মধু খেতে পারেন। মধু অন্যান্য উপকারিতার পাশাপাশি দুঃশ্চিন্তা ও
মানসিক চাপ (Worries and Stress) কমাতে বেশ কার্যকরি।
· কাঠবাদাম
খান, দিনে অন্ততঃ ৬-৭টি। কাঠবাদামের ভিটামিন ‘বি’ ও ‘ই’ আমাদের মানসিক চাপ মুক্ত
রাখে।
· সবুজ শাক
সব্জি বেশি করে খান, কোনো মানা নেই। যেমন : শশা, ব্রকলি ইত্যাদি। এসবে প্রচুর ফলিক
এসিড ও ম্যাগনেসয়িাম আছে, এইসব উপাদান দুঃশ্চিন্তা ও মানসিক চাপ (Worries and
Stress) মুক্ত রাখে।
· মিষ্টি
আলু খেলেও আপনি মানসিক চাপ থেকে মুক্ত থাকবেন।
· ডিম,
দুধ, মটরশুটি, কলিজা, শিম নিয়মিত খান। এসবে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ‘বি’ আছে।
ভিটামিন ‘বি’ খিটখিটে মেজাজ ও বিষাদতা থেকে পরিত্রাণ দেয়।
তবে খুবই সাবধান, কফি, চা, কোলা,
জাঙ্ক ফুড ও সমস্ত অ্যালকোহল জাতীয় খাদ্য পরিহার করুন। কারণ এ জাতীয় খাদ্য রক্তে
অ্যান্ড্রোনালিনের নিঃসরণ বাড়িয়ে দেয়, ফলে দুঃশ্চিন্তা ও মানসিক চাপ
(Worries and Stress) বৃদ্ধি ঘটে।
আরো পড়ুন : লাল আটার পুষ্টিগুণ ও স্বাস্থ্য উপকারিতা
আজ রাখছি, বরাবরের মতই ধন্যবাদ
জানাচ্ছি, “সবার জন্য ব্লগ” –এর সাথে থাকার জন্য। নিজে জেনে অন্যকে জানাতে শেয়ার
করুন।
0 মন্তব্যসমূহ
Always stay connected with SOBAR JONNO BLOG
সবসময় যুক্ত থাকুন সবার জন্য ব্লগের সাথে।