সূস্থ্য ও ভাল আছেন সবাইকে
নিয়ে আশা রেখে শুরু করছি আজকের বিষয়।
আজ লিখছি, “লাল আটার পুষ্টিগুণ ও স্বাস্থ্য উপকারিতা (Nutrition and Health Benefits of red Flour)”
শুরুতেই জানব- ঃ- লাল আটা ও সাদা আটার তফাৎ -ঃ
আটা বা ময়দা তৈরি হয় গম থেকে। এই গমের ইংরেজি নাম Bread
Wheat বা Common Wheat. আর বৈজ্ঞানিক নাম হচ্ছে : Triticum aestivum. এই গম যখন
রিফাইন্ড করে খোসা ফেলে দিয়ে ভাঙানো হয় তখন সাদা আটা পাওয়া যায় আর প্রকৃত গম থেকে
অর্থ্যাৎ রিফাইন্ড না করে গমের উপরের লাল আবরণসহ ভাঙালে পাওয়া যায় লাল আটা।
অতএব, সহজ ভাষায়
বুঝতেই পারছেন। লাল আটা আর সাদা আটার তফাৎ।
এখন জানাবো, ঃ- লাল আটা ও সাদা আটার পুষ্টিগুণের তফাৎ -ঃ
গমের যে উপরিভাগে লাল আবরণ থাকে, যেটা সমেত
ভাঙালে লাল আটা পাওয়া যায়; এই আবরণ এক ধরনের খনিজ উপাদানে ভরপুর, যা আমাদের দেহের
প্রায় ৩০০ রকমের এনজাইমের কাজ পরিচালনা করে থাকে। এই আবরণে প্রচুর পরিমাণে
ম্যাগনেসিয়াম নামক খাদ্য উপাদান থাকে। সাদা আটার তুলনায় লাল আটাতে প্রোটিন,
কার্বোহাইড্রেট, আঁশ বেশি থাকে, ফ্যাট এবং ক্যালরি কম থাকে।
এছাড়াও
লাল আটাতে ফলিক এসিড, জিংক, ফসফরাস, কপার, ভিটামিন বি১, বি২
এবং বি৩ প্রয়োজনমাফিক থাকে। তুলনামূরক পার্থক্য লক্ষ্য করা যাক-
স্বাস্থ্যকথা ও হেলথটিপ্স জানুন এখান থেকে
৩৮ গ্রাম লাল ও সাদা আটার পুষ্টি পার্থক্য :
লাল আটা-
ü ক্যালরি : ২৮ কিলোক্যালরি।
ü ফ্যাট : ২.৫ গ্রাম।
ü কার্বোহাইড্রেট
: ৯.১ গ্রাম।
ü খাদ্য
আঁশ : ২.৮ গ্রাম।
ü প্রোটিন : ৫.৫ গ্রাম।
সাদা আটা-
ü ক্যালরি : ৮৭ কিলোক্যালরি।
ü ফ্যাট : ৭ গ্রাম।
ü কার্বোহাইড্রেট
: ৬.০ গ্রাম।
ü খাদ্য
আঁশ : ১.৫ গ্রাম।
ü প্রোটিন : ৩.৪ গ্রাম।
উপরের তুলনা থেকে স্পষ্ট যে, সাদা আটার তুলনায় লাল আটাতে পুষ্টিগুণ
অনেক বেশি।
যে যে কারণে লাল আটা খাবেন, বিস্তারিত পুষ্টি উপাদান জেনে নিই :
ü ফাইবার :
ফাইবার পেটের চর্বি কমাতে সাহায্য করে, ফলে মোটা হওয়ার শংকা থাকে না।
ü ম্যাগনেসিয়াম
: আমাদের দেহের প্রায় ৩০০ ধরনের এনজাইমের কাজ সম্পাদন করে থাকে।
ü ম্যাঙ্গানিজ
: এটি ফ্যাটি অ্যাসিডগুলোকে শরীরে সম্পূর্ণ হজম করতে সাহায্য করে।
ü প্রোটিন
: রোগ প্রতিরোধ সৃষ্টির জন্য এটি শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি করে।
ü টক্সিন :
লাল আটার মধ্যে থাকা আঁশ শরীরের টক্সিন জাতীয় উপাদান বের করে দেয়, ফলে ব্রণের সমস্যা থাকে না।
ü অদ্রবণীয়
খাদ্য আঁশ : এটি শরীরে রক্তের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে, ফলে ডায়াবেটিস ঝুঁকি কমে যায়
এবং ডায়াবেটিসের রোগীরা ভাল থাকে।
ü সেলেনিয়াম
: শরীরে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে যা থাইরয়েড গ্রন্থির সুরক্ষা, চর্মরোগ
ও অ্যাজমা প্রতিরোধ করে।
ü ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট
: দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি করে।
ü লিগনান :
আমাদের শরীরের ক্যান্সার প্রতিরোধ করে।
ü থায়ামিন
: স্নায়ুতন্ত্রের সূস্থতা রক্ষা করে হাত ও পায়ের নার্ভ সচল রাখে।
ü শর্করা :
শর্করা দেহের শক্তি জোগায়, লাল আটাতে শর্করার পরিমাণ বেশি থাকে।
ü ক্যালরি
: লাল আটাতে ক্যালরি কম থাকে, তাই মোটা হওয়ার শংকা থাকে না। অতিরিক্ত ক্যালরি
আমাদের শরীরকে মোটা করে তোলে।
ü খাদ্য
আঁশ : রক্তের কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে, ফলে আমাদের দেহের হাইপারটেনশন কমে।
ü ভিটামিন
ই : ভিটামিন ‘ই’ শরীরের স্নায়ু ও মাংসপেশীর কাজ সঠিকভাবে করে থাকে।
লাল আটার স্বাস্থ্য উপকারিতা (Health Benefits of red Flour) :
১। স্থূলতা নিয়ন্ত্রণে লাল আটা : লাল আটায়
ক্যালরির পরিমাণ কম থাকে বলে স্থূলতা নিয়ন্ত্রণ সহজ হয়।
২। ব্রণ দূর করতে লাল আটা : লাল আটায় বিদ্যমাণ আঁশ আমাদের দেহের টক্সিন
জাতীয় উপাদান বের করে দেয়, ফলে ব্রণের প্রাদুর্ভাব কমে যায়।
৩। অ্যান্টিবডি তৈরিতে লাল আটা : লাল আটাতে রয়েছে প্রোটিন, যা দেহের রোগ
সৃষ্টিকারী জীবাণূকে ধ্বংস করে দেহে প্রয়োজনীয় অ্যান্টিবডি তৈরি করে।
৪। পরিপাকে সহায়তায় লাল আটা : লাল আটাতে রয়েছে ম্যাঙ্গানিজ, যা পরিপাকতন্ত্রকে
পরিশুদ্ধ রাখে। সব ধরনের খাদ্য হজমে সহায়ক ভূমিকা রাখে।
৫। এনজাইম পরিচালনায় লাল আটা : লাল আটাতে রয়েছে ম্যাগনেসিয়াম, যা দেহের
৩০০ ধরনের এনজাইম পরিচালনার কাজ করে।
৬। ফ্যাট নিয়ন্ত্রণে লাল আটা : লাল আটাতে পরিমাণমতো ফ্যাট থাকার কারণে
পেটের চর্বি কমাতে সাহায্য করে।
৭। মাংসপেশী গঠনে লাল আটা : ভিটামিন ‘ই’ থাকার ফলে লাল আটাতে মাংসপেশী
গঠন হয়।
৮। উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে লাল আটা : লাল আটায় খাদ্য আঁশ রয়েছে বলে
রক্তের কোলেস্টেরল কমিয়ে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে।
৯। রোগ প্রতিরোধে লাল আটা : লাল আটাতে ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট রয়েছে যা শরীরের
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
১০। কর্মক্ষম রাখতে লাল আটা : লাল আটাতে প্রয়োজনীয় পরিমাণে শর্করা
বিদ্যমান, যা মানবদেহকে কর্মক্ষম রাখে।
১১। ক্যান্সার প্রতিরোধে লাল আটা : ভিটামিন বি৬ এর অভাবে
ক্যান্সার রোগ সৃষ্টি হয়। যেহেতু লাল আটাতে ভিটামিন বি৬ আছে সেহেতু
ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়ক ভূমিকা রাখে।
যাদের জন্য অপকারী লাল আটার রুটি বা খাদ্য :
ü লাল আটা
খেলে যাদের এলার্জির সমস্যা হয়, তারা লাল আটা খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
ü যাদের গল
ব্লাডারে পাথর রয়েছে, তারা লাল আটা খাবেন না।
ü যাদের
কিডনী সমস্যা রয়েছে অর্থ্যাৎ কিডনী রোগে আক্রান্ত তাদের লাল আটা খাওয়ার আগে
ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিৎ।
টিপ্স : আটা সিদ্ধ করে কয়েক মিনিট রেখে
দিয়ে তারপর রুটি বানালে রুটির পুষ্টিগুণ বৃদ্ধি পায় এবং অনেক সময় ধরে নরম থাকে।
পরিবারের সবাইকে নিয়ে লাল আটা খাওয়ার অভ্যেস গড়ুন এবং পুষ্টিগুণে
সূস্থ্য থাকুন।
বরাবরের মতই ধন্যবাদ জানাচ্ছি,
“সবার জন্য ব্লগ” –এর সাথে থাকার জন্য।
নিজে জেনে অন্যকে জানাতে শেয়ার
করুন।
স্বাস্থ্যকথা ও হেলথটিপ্স জানুন এখান থেকে
0 মন্তব্যসমূহ
Always stay connected with SOBAR JONNO BLOG
সবসময় যুক্ত থাকুন সবার জন্য ব্লগের সাথে।