চরিত্রহীন নারীর মর্যাদা বনাম বিধবার সর্বনাশ । The Dignity of a Characterless Woman VS the Defeat of a Widow

চরিত্রহীন নারী, বিধবা নারী, বর্তমান সমাজে বিধবা নারীর অবহেলা দূর্দশা, চরিত্রহীন নারীর মর্যাদা, বিধবা নারীর অমর্যদা, স্বামী পরিত্যক্ত বা বিধবা নারীর জীবন কাহিনী, বিধবা নারীর দুঃখ দূর্দশা
চরিত্রহীন নারীর মর্যাদা বনাম বিধবার সর্বনাশ


( দুইটি বাক্য ব্যবহার করে নিচ্ছি আগে- সৎ লোকের ভাত নেই আর বাঁকা পথের ক্লান্তি নেই। আমার আজকের আলোচনা,  “চরিত্রহীন নারীর মর্যাদা বনাম বিধবার সর্বনাশ (The Dignity of a Characterless Woman VS the Defeat of a Widow)”।  বুঝতেই পারছেন, পরিচিতি দুইটি চরিত্র নিয়ে কিছু কথা লিখব, যা আমাদের সমাজের আশেপাশে অহরহ দেখা যায় )

প্রথমেই জানি, চরিত্রহীন নারী (Characterless Woman) ও বিধবার (Widow) কি 

১। চরিত্রহীন নারী (Characterless Woman) :

 
চরিত্রহীন নারী, বিধবা নারী, বর্তমান সমাজে বিধবা নারীর অবহেলা দূর্দশা, চরিত্রহীন নারীর মর্যাদা, বিধবা নারীর অমর্যদা, স্বামী পরিত্যক্ত বা বিধবা নারীর জীবন কাহিনী, বিধবা নারীর দুঃখ দূর্দশা
চরিত্রহীন নারীর মর্যাদা বনাম বিধবার সর্বনাশ

চরিত্র (Character) মানুষের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ, এ কথা আপনি জানেন। তাই মানার ব্যাপারটাও আপনার উপরই ছেড়ে দিলাম। বাহ্যিক লেবাসে আপনি চরিত্রের মুকুট কত বড়ভাবে পড়ে আছেন সেটা জানা আমার কেনো বিধাতাও মাঝে মাঝে ফুলস্টপ মেরে বসে। যাই হোক, বলছিলাম চরিত্রহীন (Characterless Woman) নারীর কথা। 

নিয়ম কানুনের ভাষায়, নিজের স্বতিত্ব নিয়ে খেলা করে ইজ্জত সম্মান বিকিয়ে দিয়ে লালসার শিকারে অনেককে পরিণত করাকেই আমি চরিত্রহীন নারী বলছি। তাছাড়া, আপনারা জ্ঞানী মানুষ, অবশ্যই জানেন, চরিত্র মানুষের কয়েক ধরনের হয়ে থাকে। শুধু কারো বিছানার সঙ্গী হয়ে অক্লান্ত দেহটাকে ক্লান্ত করে ফেলে সময় কাটানোকেই একমাত্র চরিত্রহীনা বলা হয় না। একজন মানুষের চলাফেরা, লেনদেন সব মিলিয়ে তাঁর চরিত্রের বিভিন্ন দিক ফুটে ওঠে। সেই সকল বিভিন্ন দিকের ব্যতয় নিজের ইচ্ছায় ঘটালেই চরিত্রহীন হয়ে পড়ে সে। সে সব আপনারা জানেন, শুধু স্মরণ করিয়ে দিলাম মাত্র। তবে আমাদের সমাজে প্রচলিত বিষয় হচ্ছে, যৌনতা নিয়ে বা দেহ বিলিয়ে দেওয়াকে চরিত্রহীনতা (Characterless) বোঝায়। আমার আজকের আলোচনা প্রচলিত ধারণাকে নিয়েই।  

একজন নারী অবাধে মেলামেশা করছে, একাধিক পুরুষের সাথে লীলাখেলায় মেতে, বিভিন্ন ছলা-কলা দ্বারা নিজের ইচ্ছা বা লোভের বশবর্তী হয়ে চাহিদা মেটাতে শারীরিক বা দৈহিক সম্পর্কে লিপ্ত থাকছে দিনের পর দিন বা বছরের পর বছর। সাথে নাইট ক্লাব ফ্রি। কিন্তু আপনি আমি দিব্যজ্ঞানে তাকে ভাল চরিত্রের সার্টিফিকেট দিয়ে যাচ্ছি। কখনো নিজে, কখনো নিজের সন্তানের জন্য, কখনো নিজের আত্মীয় স্বজনের জন্য ঘরের লক্ষ্মী করতে লাইনে দাঁড়িয়ে যাচ্ছি বিন্দুমাত্র সন্দেহ প্রকাশ না করেই। মেয়েটি দুধে ধোয়া তুলসী পাতা ভেবে। সে নারীর জীবনে ১ম ছোঁয়া হতে যাচ্ছে এটা, এই ভেবেই সাফাই গেয়ে চলেছি। সরি, আপনি আবার অন্যভাবে নিবেন না। দোষ অবশ্যই আপনার না। কারণ আপনিতো জানেন না, আসলে মেয়েটি কেমন? যেহেতু মেয়েটির জন্য কোনো সামাজিক বা ধর্মীয় সার্টিফিকেট নেই যে সে খারাপ। হ্যাঁ, এটাকেইতো চরিত্রহীনা (Characterless) বলছি আমি। এই নারীকে নিয়ে সমাজ সংসার, পরিবার পরিজন, আইন আদালত এক বাক্যেই বলে দিবে কুমারী বা সৎ স্বতীত্বের মেয়ে। এছাড়া যদি কেউ সে নারীর বদচরিত্র স্বভাব জেনে ফেলে প্রকাশও করে, এটা অবিশ্বাস্য হয়ে পড়ে এবং প্রকাশিত ব্যক্তি বিভিন্ন লাঞ্চনার শিকার হয়ে থাকে। অতএব, মূলে এসে সেই নারীকে কুমারী এবং স্বতী বলেই বিয়ে সাধীর আয়োজন করা হয়, যেখানে পরিবার ও সমাজের গর্বের সীমা থাকেনা। অপরদিকে যে পুরুষ বিয়ে করছে তাকে সেও স্বানন্দে অরজিনাল জিনিস ঘরে তুলছে বলেই খুশিতে বাগবাগ। অথচ চরিত্রহীনা  (Characterless) সে নারী কত পুরুষকে যে গঙ্গাস্ন্যানের মতো যৌনস্ন্যান করিয়ে সিনিয়র খেলোয়াড় হয়ে গেছে, সে খবর বেখরই রয়ে যায়। এই নারীর সব পাপ মুছে গেল শুধুমাত্র বিয়ে না হওয়া এই শব্দটির জন্য। সে অবিবাহিত থেকে ১৪ পুরুষকে নিয়ে ঢলাঢলি করেছে, কিন্তু বিয়ে নামের শব্দটি তার জীবনের পাশে ছিল না তাই।


অপরদিকে, 

২। বিধবা নারী (Widow) : 

সমাজ সংসারের সব নিয়ম নীতি মেনে, ধর্মীয় অনুশাসনের পীড়িতে বসে নিজেকে স্বতী রেখে রঙিন শাড়ী জড়িয়ে সাদা কাপড়ে কবরে যাওয়ার প্রত্যয় করে স্বামীর ঘরে প্রবেশ করে।
সে নারীর প্রথম স্পর্শ হয় সেই বাসর রাতেই। জীবনে প্রথম পুরুষের ছোঁয়া পেতে শংকা ভয় দূরে ঠেলে প্রথম রাতে অনেকেই প্রচন্ড ব্যথাটাকেও হাসি মুখে মেনে নিয়েই রঙিন স্বপ্নের প্রথম সুতো গেঁথে থাকে। চলতে চলতে হঠাৎ ঝড়ে সেই স্বপ্নের মূল সারথী স্বামীকে হারিয়ে বসে। যখন কিনা জানা গেল মেয়েটি বিধবা (Widow) হয়ে গেছে, ঠিক সেই মূহুর্ত থেকে সে নারীর জীবন ঘণীভূত হয়ে যায় অন্ধকারে। পরিবার থেকে সমাজ সংসারের যত হীন্যমনতা চেপে বসে। অপয়া থেকে শুরু করে জীবন চলার সামনের পথ হয়ে পড়ে বিষাদময়। 

সম্মানিত জ্ঞানীজন, নিশ্চয় ১ম লাইনের ২টি বাক্যের কথা ভুলে যাননি, বলেছিলাম সৎ লোকের ভাত নেই আর বাঁকা পথের ক্লান্তি নেই। একটু মিলিয়ে দেখুন তো, চরিত্রহীন অস্বতী নারী (Characterless Woman) আর এই বিধবা (Widow) নারী পাশাপাশি রেখে। আমি এই মূহুর্তেও বলছি, আপনি ঐই অবিবাহিত চরিত্রহীন নারীকেই (Characterless Woman) পজেটিভ চোখে দেখছেন। আর বিধবা (Widow) নারীটাকে মেনে নিতে পারছেন না, কারণ সে বিবাহিতা। তার অপরাধ, ধর্মের রীতি মেনে বৈধ পুরুষের সাথে সবার গোচরে বিছানায় রাত যাপন করেছিল। এটাই তার মহাপাপ। এ যেন বিধবা (Widow) মেয়েটির নিজের সৃষ্টি তকমা। কেন এ দায় তার ভেবে তাকে পারিবারিক বা সামাজিকভাবে হেয় করে নিচু চোখে দেখি? কেউ কেউ তো তাকে কুপ্রস্তাব দিয়ে বসি, কিন্তু বিধবা (Widow) মেয়েটি মুখ বুজে সহ্য করে চোখে জল আনে শুধুমাত্র বিধবা (Widow) তকমার কারণে। কিন্তু ভেবে দেখেন, চরিত্রহীন ঐই নারীর (Characterless Woman) চরিত্রের সমস্যা জেনেও বাজে প্রস্তাব দিয়ে আপনি বিচারের সম্মূখীন হওয়া ছাড়া মুক্ত হতে পারতেন কিনা? অথচ বিধবা (Widow) মেয়েটা করেছে সম্পূর্ণ বৈধ এবং তার অধিকার ছিল আর চরিত্রহীন মেয়েটা সম্পূর্ণ অবৈধ এবং অনাধিকারের মাধ্যেমে জীবন চালিয়ে তার মর্যাদা সমাজে কত উঁচুতে আর বিধবার কি সর্বনাশ। 
হে জ্ঞানীজন, ও গুণীজন, আর না এভাবে। বৈধতার পথে ফিরুন। কালোকে কাল আর সাদাকে সাদা ঘোষণা দিন। দৃষ্টিভঙ্গি বদলান, বদলে যাবে দেশ, সমাজ ও সংসার। অবিবাহিত চরিত্রহীন নারীদের (Characterless Woman) বয়কট করতে না পারলেও বিধবাদের (Widow) উপর পজেটিভ দৃষ্টিভঙ্গি প্রদর্শন করুন। বিভিন্ন সমাজের বিভিন্ন অযাচিত বিধি নিষেধ বিধবা (Widow) নারীর উপর চাপাবেন না। যেমন: পোশাক আষাকে সীমাবদ্ধতা, খাবার দাবার বা চলেফেরাতে সীমাবদ্ধতা। এ ধরনের কাজ থেকে বিরত থেকে বিধবাদের স্বাভাবিক জীবন দানে উৎসাহিত করুন। একটি দূর্ঘটনা সারাজীবনের কান্নাতে রূপান্তরিত না করে দূর্ঘটনাকে ভুলে যেতে দিন। ভেবে দেখুন এইসব একচোখা ভুল নীতির কারণেই আজ সমাজ সংসারে অশান্তি আর বিচ্ছেদের ঘটনা অগণিত। কিন্তু বিধবা মেয়েটিকে যদি স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে দেন, নতুন সংসার বেঁধে দেন, দেখবেন সেই সংসারের মতো সুখ আর দশটা সংসারে হবে না। কারণ বিধবা মেয়েটা জানে হারানোর ব্যথা, স্বপ্ন ভাঙ্গার নিরব যন্ত্রণা, তাই যে দ্বিতীয়বার সবহারা না হতে চেয়ে অনেক কিছু ছাড় দিয়ে অনেকের স্বপ্নকে সার্থক করে তুলবে। সমাজ থেকে বিধবাদের সাদা শাড়ি পুড়ে যাক, নতুন রঙিন শাড়ি জড়িয়ে থাক সারা অঙ্গে। আসুন, আমরা এগিয়ে আসি এসব মা বোনদের জন্য। যথাযথ সম্মান দিতে শিখি আর বাস্তবতা বুঝতে শিখি নিজের জীবনের আলোকে। দৃষ্টিভঙ্গি বদলান, বদলাবে দেশ ও সমাজ। ভাল থাকুক পৃথিবীর সব বিধবা (Widow) নারীরা, ধ্বংস হোক চরিত্রহীনা (Characterless Woman) নর্দমার কীটগুলো। 


আলহামদুল্লিাহ্ !!! ত্রিভুবনের সর্বশ্রেষ্ঠ মানব হযরত মুহাম্মদ (সঃ) নিজে বিধবা নারী বিয়ে করে সম্মানিত করেছেন বিশ্ব নারী জাতিকে। সে পথ অনুসরণ করে সৌদী আরবের প্রায় ৬৮% পুরুষে বিধবা নারীদের বিয়ে করতে আগ্রহ প্রকাশ করছে। 


ভাল থাকুন আর ভাল রাখুন, অসংগতি জানান, শেয়ার করে অন্যদের পড়ার সুযোগ করে দেন। 

আশা করছিচরিত্রহীন নারীর মর্যাদা বনাম বিধবার সর্বনাশ (The Dignity of a Characterless Woman VS the Defeat of a Widow)” ভাল লেগেছে। 


সাথে থাকুন “সবার জন্য ব্লগ” –এর।


লেখক : মসনদ সাগর
  শিক্ষক, মাস্টার ট্রেইনার, লেখক ও ফ্রিল্যান্সার, 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ