ডালিম-কে স্বর্গীয় ফল বলা হয়ে থাকে। লাল রঙের এই ফলটি-কে আমরা সবাই চিনি। প্রায় সারাবছর পাওয়া যায় ডালিম। দামে একটু বেশি হলেও খুবই উপকারি একটা ফল। একে আনার ও বেদানা নামেও ডাকা হয়। যার বৈজ্ঞানিক নাম Punica granatum এবং ইংরেজি নাম Pomegranate. প্রাকৃতিক পুষ্টিগুণে ভরপুর এই ফলটি কিছু কারণে ক্ষতির কারণও হয়ে থাকে। আমার এই আর্টিকেলে “ডালিমের পুষ্টিগুণ, স্বাস্থ্য উপকারিতা ও অপকারিতা” তুলে ধরার চেষ্টা করছি।
![]() |
ডালিমের পুষ্টিগুণ, স্বাস্থ্য উপকারিতা ও অপকারিতা । Nutrition, health benefits and disadvantages of pomegranate |
Find out all the news from here
Learn more health tips and lifestyle here
:::: ডালিমের প্রাকৃতিক গুণ ::::
শক্তজাতীয় খোসাতে মোড়ানো থাকা স্ফটিকের ন্যায় লাল রঙের দানাগুলোই এই ফলের প্রধান অংশ, যা আমরা মজা করে খেয়ে থাকি। ডালিম গাছের ফুল, ফল, ফলের খোসা, পাতা, শিকড় কোনটাই ফেলনা নয়, অর্থ্যাৎ আগাগোড়া ঔষধ হিসেবে কাজ করে। ডালিমে প্রচুর পরিমাণে ফসফরাস রয়েছে, যা আপেল ও আমের চেয়ে ৪গুণ বেশি, আতা ও আঙ্গুরের চেয়ে দ্বিগুণ এবং কুল(বরই) ও আনারসের চেয়ে ৭গুণ বেশি।
ডালিম আয়ুর্বেদিক ও ইউনানী চিকিৎসায় পথ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। কবিরাজী চিকিৎসকদের মতে, ডালিম হচ্ছে হার্টের শ্রেষ্ঠতম হিতকর ফল। এতে আছে বিউটেলিক অ্যাসিড, আরসেলিক অ্যাসিড ও কিছু অ্যালকালীয় দ্রব্য; যেমন : পেপরেটাইরিন, আইসোপেরেটাইরিন, সিডোপেরেটাইরিন, মিথাইলপেরেটাইরিন ইত্যাদি মূল উপাদান থাকায় অনেক রোগের উপশমকারী হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। ডালিম ত্রিদোষ বিকারের উশামক, শুক্রবর্ধক, দাহ-জ্বর, পিপাসানাশক, মেধাবলকারক, অরুচিনাশক ও তৃপ্তিদায়ক। এ গাছের ছাল, শিকড় ও ফলের খোসা দিয়ে আমাশয় ও উদারাময় রোগের ঔষধ তৈরি হয়, এমনকি ডালিম গাছের ফুলও রক্তস্রাবনাশক।
চিকিৎসকদের ভাষ্যে, প্রতি ১০০গ্রাম খাবার উপযোগি ডালিমে রয়েছে, শর্করা ১৪,৫ গ্রাম, প্রোটিন ১.৬ গ্রাম, ফ্যাট ০.১ গ্রাম, ফসফরাস ৭০ মিঃগ্রাম, ক্যালসিয়াম ১০ মিঃগ্রাম, আয়রণ ০.৩ মিঃগ্রাম, ভিটামিন সি ১৪ মিঃগ্রাম এবং খাদ্যশক্তি ৫৬ কিলোক্যালরি।
Find out all the news from here
Learn more health tips and lifestyle here
:::: ডালিমের
স্বাস্থ্য উপকারিতা ::::
১। হৃদরোগের ঝুঁকি হ্রাস করে : ডালিমে থাকা পুষ্টি উপাদান হার্টের রক্ত চলাচল স্বাভাবিক রাখে, ফলে হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়।
২। বয়সের ছাপ দূর করে : ডালিমে থাকা উচ্চ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট দেহের ত্বকের বয়সের ছাপ নিয়ন্ত্রণ করে। সূর্য়ের তাপ ও নোংরা পরিবেশের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে মুক্ত রাখে।
৩। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে : চিকিৎসকদের মতে, কেউ যদি উচ্চরক্তচাপে ভোগেন, মাত্র ২ সপ্তাহ ডালিম খেলে রক্তচাপ স্বাভাবিক হয়ে আসবে।
৪। স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে : ডালিমে থাকা পুষ্টি উপাদান স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে, যার ফলে অ্যালঝেইমার্সের মতো রোগীদের জন্য দারুণ উপকারি।
৫। ক্যান্সার প্রতিরোধী : ডালিমের উপকারের মধ্যে অন্যতম উপকার হচ্ছে, এতে থাকা উপাদান দেহের ক্যান্সারে সহায়তা সেলের বিরুদ্ধে লড়াই করে ক্যান্সার হওয়ায় বাধা প্রদান করে। বিশেস করে স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধে প্রমাণিত।
৬। আথ্রাইটিস ও হাড়ের জয়েন্টে ব্যথা উপশম করে : শীতকালে বেশিরভাগ মানুষ হাড়, ঘাড় ও কোমড় ব্যথায় ভুগে থাকেন। ডালিমে থাকা উপাদান হাড়ের জয়েন্টের ব্যথা উপশমে কার্যকরি।
৭। রক্তে হিমোগ্লোবিন বাড়ায় : দেহের অ্যানেমিয়া ও রক্তের নানাবিধ সমস্যা দূর করে ডালিম। তার মধ্যে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বৃদ্ধি অন্যতম।
৮। ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধ করে : দেহের ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধ করে শরীরকে সূস্থ্য রাখতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে ডালিম। এছাড়াও ফাংগাস ইনফেকশনের বিরুদ্ধে কার্যকরি।
৯। প্রাকৃতিক ইনসুলিন : বিশেষ কিছু ক্ষেত্র ছাড়া ডালিম ডায়াবেটিস রোগীদের সমস্যা করে না। একে প্রাকৃতিক ইনসুলিন বলা হয়। এটিকে অনেকেই ইনসুলিনের বিকল্প হিসেবে গ্রহণ করে থাকে।
১০। হজমে সহায়তা করে : ডালিমে প্রায় ৪৫ শতাংশ আঁশ বিদ্যমান। আঁশ শরীরের খাদ্য হজম করে। তাই আমরা রিচ ফুড বা বিভিন্ন ধরনের জাঙ্কফুড খাওয়ার পর ডালিম খেলে সহজে হজম হয়ে যাবে।
Find out all the news from here
Learn more health tips and lifestyle here
: এছাড়াও ডালিম ও ডালিম গাছের কিছু ঔষুধী গুণ তুলে ধরা হল :
·
দূর্ঘটনায় কোনো অংশ খেতলে গেলে, ছিড়ে গেলে বা কেটে গেলে ডালিমের ফুল কচলিয়ে ক্ষত স্থানে রস চেপে ধরলে রক্ত পড়া বন্ধ হয়ে যাবে।
·
যাদের নাক দিয়ে হঠাৎ হঠাৎ রক্ত পড়ার রোগ আছে, তারা যদি ডালিম ফুলের রস বের করে নাকে নিয়ে নিঃশ্বাস নেয় তাহলে রক্ত পড়া বন্ধ হয়ে যাবে।
·
য়ারা আমাশয় রোগে ভূগছেন, তাঁরা ডালিমের কাঁচা অথবা শুকনো খোসা সেদ্ধ করে খেলে ভাল উপকার পাবেন।
·
ডালিম গাছের ছাল গুঁড়ো শরীরের যেকোনো অংশের বাগি বা উপদংশ নিরাময় করে। মেয়েদের শ্বেতপ্রদর ও রক্তপ্রদর নিরাময়ে ডালিমের ৪/৫ ফুল বেটে মধুর সাথে মিশিয়ে খেলে রোগ সেরে যাবে।
·
যেসব মহিলাদের গর্ভপাতের সমস্যা আছে, ডালিম গাছের পাতা বেটে মধু মিশিয়ে খেলে গর্ভপাতের আশংকা কমে যাবে।
·
কৃমির যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতে ডালিম গাছের শেকড়ের ছাল গূঁড়ো করে চুনের সাথে মিশিয়ে সেবন করলে সহজেই কৃমি মারা যাবে।
·
বাচ্চাদের পেটের বিভিন্ন সমষ্যা দূর করতে ডালিম গাছের শেকড়ের ছাল তুলে গুঁড়ো করে মধু দিয়ে খাওয়ালে পেটের সবধরনের সমস্যা থেকে মুক্তি মিলবে।
:::: ডালিমের
স্বাস্থ্য অপকারিতা ::::
পৃথিবীর সবকিছুরই উপকার
ও অপকার বিদ্যমান। তেমনি
ডালিম
আনার
বা বেদানার উপকারের শেষ নেই, পাশাপাশি নিচের ৪ ধরনের ব্যক্তি জন্য উপকার না হয়ে উল্টো প্রানঘাতি হতে পারে :
i. যারা সর্দি কাশিতে ভূগছেন, তারা খাবেন না। খেলে
আপনার
প্রচন্ড
ক্ষতি
হতে
পারে। কারণ
ডালিম
বেদানা
বা আনার ঠান্ডা জাতীয় ফল।
ii. যারা মানসিক রোগী, যাদের মানসিক রোগের ঔষধ নিয়মিত খেতে হয়, তাদের জন্য ডালিম বেদানা বা আনার বিষের সমতূল্য, তাই সাবধান এদের ক্ষেত্রে।
iii. য়াদের অ্যালার্জি সমস্যা প্রকট, ধুলো বালি বা নোংরা পরিবেশ থেকে অ্যালার্জিতে ভোগেন, তাদের জন্য ডালিম বেদানা বা আনার একদম খাওয়া চলবে না। খেলে
অ্যালার্জির সমস্যা
বৃদ্ধি
পাবে।
iv. যাদের রক্তচাপ কম, তাদের ডালিম বেদানা বা আনার খুব ক্ষতিকর। উচ্চক্তচাপের মানুষেরা খেলে
যেমন
খুব
লাভবান
হবেন
তেমনি
নিম্নরকবতচাপের মানুষেরা খেলে
প্রাণ
সংশয়ে
পড়তে
পারেন।
বরাবরের মতই ধন্যবাদ জানাচ্ছি, “সবার জন্য ব্লগ” –এর সাথে
থাকার জন্য।
নিজে জেনে অন্যকে জানাতে শেয়ার করুন।
Find out all the news from here
Learn more health tips and lifestyle here
0 মন্তব্যসমূহ
Always stay connected with SOBAR JONNO BLOG
সবসময় যুক্ত থাকুন সবার জন্য ব্লগের সাথে।