বছরজুড়ে সহজলভ্য আঙ্গুর ফলকে আমরা সবাই চিনি। রিচফল হিসেবে এই আঙ্গুর ঘরে
ঘরে সমাদৃত। আগে শুধু সবুজ রঙের আঙ্গুর পেলেও বর্তমানে বাজারে বিভিন্ন রঙ ও
স্বাদের আঙ্গুর পাওয়া যায়। সবুজ, লালচে, খয়েরি, কালো, নীল, সাদা, বেগুনি রঙের
আঙ্গুরগুলি সাইজেও বিভিন্নতা রয়েছে। লম্বা, একদম গোল, কিছুটা চ্যাপ্টা ইত্যাদি।
তবে নিশ্চিতভাবে বলা যায় রঙ, সাইজ বা স্বাদ যেমনই হোক সবধরনের আঙ্গুরেই রয়েছে
প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি উপাদান, যা আমাদের স্বাস্থ্যের নানাভাবে উপকার সাধন করে
থাকে। এই আর্টিকেলে বিস্তারিতভাবে “আঙ্গুরের পুষ্টিগুণ ও ১১ উপকারিতা” তুলে
ধরলাম। আশা করছি সাথেই থাকবেন শেষ পর্যন্ত।
আঙ্গুরের পুষ্টিগুণ ও ১১ উপকারিতা । Nutritional Value and 11 Benefits of Grapes
আরো তথ্যভিত্তিক টিপ্স জানতে এখানে ক্লিক করুন
:::: আঙ্গুরের পুষ্টিগুণ ::::
থোকায় থোকায় ধরতে থাকা এই ফলটির গাছে
এক থোকায় ৬টি থেকে ৩০০টি পর্যন্ত ধরে থাকে। আঙ্গুর গাছকে লতা জাতীয় দ্রাক্ষলতা গাছ
বলা হয়ে থাকে। আঙ্গুরের ইংরেজি নাম grape। নিশ্চয় আপনারা জানেন, এই সুস্বাদু
আঙ্গুর ফল দিয়েই আরেকটি সুস্বাদু খাবার কিসমিস তৈরি হয়।(জেনে নিন কিসমিস যেভাবেতৈরি হয়)। আঙ্গুর চাষ করতে আলাদা জায়গার প্রয়োজন হয় না। যেখানে পানি জমে থাকে
না এবং প্রায় সময় রোদ থাকে, এমন যে কোনো ছোট পরিসরের জায়গাতে চাষ করা যায়। যেমন :
বাড়ির আঙ্গিনা, উঠানের কর্ণার, বাসার বাড়ির ছাদে, বাসা বাড়ির বারান্দা ইত্যাদি।
আঙ্গুরে প্রোটিন, শর্করা, চর্বি, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, লৌহ, খনিজ, পটাসিয়াম,
থিয়ামিন, ভিটামিন এ বি সি, রিবোফ্লাভিন বিদ্যমান। প্রতি কেজি আঙ্গুর থেকে প্রায়
৪৫০ ক্যালরি খাদ্যশক্তি পাওয়া যায়।
উইকিপিডিয়া তথ্য মতে, প্রতি ১০০ গ্রাম অর্থ্যাৎ ৩.৫ আউন্স লাল
অথবা সবুজ আঙ্গুরে নিম্নরুপ খাদ্যপুষ্টি বিদ্যমান :
খাদ্যশক্তি ৬৯ কিলোক্যালরি, শর্করা
১৮.১ গ্রাম, চিনি ১৫.৪৮ গ্রাম, খাদ্যে ফাইবার ০.৯ গ্রাম, স্নেহ পদার্থ ০.১৬ গ্রাম,
প্রোটিন ০.৭২ গ্রাম, ভিটামিনের মধ্যে থায়ামিন বি১ ০.০৬৯ মিঃগ্রাম, রিবোফ্লাভিন বি২
০.০৭ মিঃগ্রাম, ন্যায়েসেন বি৪ ০.১৮৮ মিঃগ্রাম, প্যাটটোথনিক অ্যাসিড বি৫ ০.০৫ মিঃগ্রাম,
ভিটামিন বি৬ ০.০৮৬ মিঃগ্রাম, ফোলেট বি৯ ২ মাইক্রোগ্রাম, কোলিন ৫.৬ মিঃগ্রাম,
ভিটামিন সি ৩.২ মিঃগ্রাম, ভিটামিন ই ০.১৯ মিঃগ্রাম, ভিটামিন কে ১৪.৬ মাইক্রোগ্রাম,
ধাতুর মধ্যে ক্যালসিয়াম ১০ মিঃগ্রাম, লোহা ০.৩৬ মিঃগ্রাম, ম্যাগনেসিয়াম ৭
মিঃগ্রাম, ম্যাঙ্গানিজ ০.০৭১ মিঃগ্রাম, ফসফরাম ২০ মিঃগ্রাম, পটাসিয়াম ১৯১
মিঃগ্রাম, সোডিয়াম ২ মিঃগ্রাম, দস্তা ০.০৭ মিঃগ্রাম এবং অন্যান্য উপাদানের মধ্যে
পনি আছে ৮১ গ্রাম।
:::: আঙ্গুরের ১১ উপকারিতা ::::
আরো তথ্যভিত্তিক টিপ্স জানতে এখানে ক্লিক করুন
আঙ্গুরের অসংখ্য উপকারিতার মধ্যে
১১টি উপকারিতা তুলে ধরা হল :
i. অ্যাজমা প্রতিরোধ করে : অ্যাজমা থেকে মুক্ত থাকতে ফুসফুসে আর্দ্রতা দরকার হয়। আঙ্গুর
ফুসফুসের আর্দ্রতা বাড়ায়। তাই ঔষধীগুণের এই আঙ্গুর খেলে অ্যাজমার ঝুঁকি থেকে রক্ষা
পাওয়া যায়।
ii. স্মৃতিশক্তি ধরে রাখে : অনেকেই আছেন সহজেই ভুলে যান অনেককিছু। কিছুক্ষণ আগের কর্মকান্ড
মনে থাকেনা। এটা এক ধরনের রোগ, অবহেলা মোটেও ঠিক না। আঙ্গুর এই জাতীয় ভুলে যাওয়া
রোগ থেকে মুক্ত রাখতে সাহায্য করে। তাই আমাদের স্মৃতিশক্তি ঠিক রাখতে প্রতিদিন
অল্প পরিমাণ হলেও আঙ্গুর খাওয়া দরকার।
iii.
মাথাব্যথা রোধ করে :
অল্প কাজের চাপে বা টেনশনে অনেকের মাথা ব্যথা হয়ে থাকে, আঙ্গুরে থাকা উপাদান
মাথাব্যথা প্রতিরোধে ভূমিকা রাখে। মাথাব্যথা শুরু হলে আঙ্গুর মুখে নিয়ে চুষলে
ব্যথা কমে আসবে।
iv.
চোখের স্বাস্থ্য ভাল রাখে :
মানুষের অমূল্য সম্পদ এই চোখের সার্বিক স্বাস্থ্যের দেখভাল করে আঙ্গুর। বয়সজনিত
কারণে বা অন্য কোনো কারণে চোখের সমস্যা বা দৃষ্টিশক্তি ঠিক রাখতে কার্যকর আঙ্গুর।
v. বদহজম রোধ করে : পাকস্থলির নানাবিধ সমস্যা, যেমন : বদহজম, অ্যাসিডিটি, চুকা ঢেক,
বুক জ্বালাপোড়া থেকে শান্তি দেয় আঙ্গুর।
vi.
স্তন ক্যান্সারে কার্যকর :
আঙ্গুর শরীরে ক্যান্সার সেল তৈরিতে বাধা প্রদান করে। গবেষণায় এসেছে, যারা স্তন
ক্যান্সারে ভূগছেন বা শংকায় আছেন তারা নিয়মিত আঙ্গুর খেলে ভাল থাকতে পারবেন।
vii.
কিডনি ভাল রাখে : কিডনির পাথর হওয়া থেকে
শুরু করে কিডনির যাবতীয় রোগব্যাধির বিরুদ্ধে লড়াই করে। আঙ্গুরে থাকা পুষ্টি উপাদান
ক্ষতিকারক ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা সহনশীল রাখে।
viii.
কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করে : আঙ্গুরে
থাকা টরেস্টেলবেন নামক যৌগ রক্তের কোলেস্টেরলের মাত্রা স্বাভাবিক রাখে।
ix.
হাড় মজবুত করে : হাড় গঠনে এবং হাড় মজবুত
করতে যে সকল খনিজ পদার্থ প্রয়োজন, আঙ্গুরে সেগুলো যথেষ্ট পরিমাণে বিদ্যমান। যেমন :
আয়রণ, ক্যালসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ।
x. ত্বকের সুরক্ষায় : ত্বককে মসৃণ, উজ্জ্বল ও স্বাভাবিক রাখতে দারুণ ভূমিকা রাখে
আঙ্গুর। এতে থাকা ফাইটো কেমিক্যাল ও ফাইটো নিউট্রিয়েন্ট ত্বক সুরক্ষায় কাজ করে।
এছাড়াও ভিটামিন সি থাকায় ত্বকের উজ্জ্বলতা নিশ্চিত করে।
xi.
চুলের যত্নে : অসচেতনতার জন্য চুলের
আগা ফেটে যাওয়া ও দিঘল কালো চুল খুশকিতে ভরে যাওয়া, রুক্ষ ধূসর হয়ে যাওয়া ঠেকাতে
আঙ্গুর অধিক কার্যকরি। শুধু এ সমস্যায় রোধ করবে না মাথায় নতুন চুল গজাতেও আঙ্গুর
অবদান রাখে।
তাই সম্মানিত পাঠকরা,
নিয়মিত কয়েকটি আঙ্গুর নিজে খান ও পরিবারের সবাইকে খাওয়ান, অনেক ভাল থাকবেন
(ইনশাআল্লাহ)
অনেক অনেক ধন্যবাদ জানাচ্ছি, “সবার জন্য ব্লগ” –এর সাথে থাকার জন্য।
নিজে জেনে অন্যকে জানাতে শেয়ার
করুন।
“আঙ্গুরের পুষ্টিগুণ ও ১১ স্বাস্থ্য উপকারিতা” লেখাটি ভাল লাগলে মন্তব্য করুন।
0 মন্তব্যসমূহ
Always stay connected with SOBAR JONNO BLOG
সবসময় যুক্ত থাকুন সবার জন্য ব্লগের সাথে।