অনেকের চেয়ে আপনি অনেক ভাল আছেন এই আশাবাদ ব্যক্ত করে ”SobarJonno Blog” এর নতুন লেখা প্রকাশ করছি ‘মধু খান সূস্থ্য জীবন পান’। আশা করছি উপকৃত হবেন।
মধু খান সূস্থ্য জীবন পান । Drink Honey Enjoys a Healthy Life
আলহামদুল্লিাহ! মধু আল্লাতায়ালার রহমতের মধ্যে বিশেষ
ধরনের রহমত ও নেয়ামত। এটি মানবদেহের শিফা। এই মধু আমাদের শরীরে নানাভাবে উপকার
সাধন করে থাকে। রোগ নিরাময়ে মধু কখনও এককভাবে আবার কখনও ভেষজ দ্রব্যের সাথে মিশিয়ে
ব্যবহার করা হয়।
পবিত্র মিশকাত শরীফ থেকে বর্ণিত, রাসুল (সাঃ) বলেছেন,
তোমরা দু’টি সেফা দানকারী বস্তুকে নিজের করে নাও, একটা হচ্ছে পবিত্র আল কোরআন আর
অন্যটা মধু। কারণ আল-কোরআন তোমার জীবন সূস্থ্য রাখবে আর মধু সূস্থ্য রাখবে তোমার
শরীরকে। মধুতে রয়েছে ৯৯প্রকার রোগের প্রতিষেধক। জেনে নিন, কিভাবে মধু খেয়ে সূস্থ্য
জীবন পাবেন।
:::: মধুর প্রকারভেদ ::::
বাজারে বিভিন্ন প্রকারের
মধু বিক্রি হয়। অনেকেই হয়তো বিষয়টা পরিষ্কার হতে পারেন না, কোন মধু আসলে ভাল,
কোনটা খেলে উপকার হবে?
আমি আপনাকে নিশ্চিত করছি
আপনি যেকোনে ধরনের খাঁটি মধু খেলেই ১০০% উপকৃত হবেন। তবে অবশ্যই ভেদ অনুযায়ী
পুষ্টিগুণের সামান্য পার্থক্য অবশ্যই আছে। যেমন :
· কালিজিরা ফুলের মধু : শুধুমাত্র কালিজিরা ফুল থেকে মৌমাছি এই মধু সংগ্রহ করে। সবচেয়ে
বেশি গুণে সমৃদ্ধ ও দামও সবচেয়ে বেশি হয়।
· সুন্দরবনের মধু : সুন্দরবন থেকে যে মধু
সংগ্রহ করা হয় তাকেই সুন্দরবনের মধু বলা হয়। এই মধুতে আমাদের বিশ্বাস বেশি, এর
দামও কালিজিরা মধুর কাছাকাছি।
· মিশ্র ফুলের মধু : বিভিন্ন ধরনের ফুল
থেকে মৌমাছি সংগ্রহ করে এই মধু তৈরি করে। অনেক পুষ্টিগুণে ভরপুর। সুন্দরবন মধুর
চেয়ে কিছুটা কম দাম।
· সরিষা ফুলের মধু : শুধুমাত্র সরিষা ফুল থেকে সংগ্রহ করে মৌমাছি এই মধু তৈরি করে।
দারুণ সুস্বাদু ও অনেক উপকারি, বাজারে কম দামী মধুর মধ্যে অন্যতম।
· লিচু ফুলের মধু : শুধুমাত্র লিচু ফুল থেকে সংগ্রহ করে মৌমাছি এই মধু তৈরি করে।
দারুণ সুস্বাদু ও অনেক উপকারি, বর্তমান বাজারে সবচেয়ে কম দামী মধু এটি।
:::: মধুর প্রাকৃতিক পুষ্টিগুণ ::::
মধুতে বিদ্যমান ৪৫টিরও বেশি খাদ্যগুণ। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল :
·
গ্লুকোজ ২৫-৩৭ শতাংশ।
·
ফ্রুক্টোজ ৩৪-৪৩ শতাংশ।
·
সুক্রোজ ০.৫-৩.০ শতাংশ।
·
মন্টোজ ৫-১২ শতাংশ।
·
অ্যামাইনো এসিড ২২ শতাংশ।
·
খনিজ লবণ ২৮ শতাংশ।
·
এনকাইম ১১ শতাংশ।
·
৩০৩ মিঃগ্রাম ক্যালরি (১০০
গ্রাম মধুতে)।
·
ভিটামিন বি১।
·
ভিটামিন বি২।
·
ভিটামিন বি৩।
·
ভিটামিন বি৫।
·
ভিটামিন বি৬।
·
আয়োডিন।
·
জিংক।
·
কপার।
·
অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান।
·
অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল উপাদান।
প্রতি ১০০ গ্রাম(৩.৫ আউন্স) মধুর পুষ্টিগত মান নিম্নরুপ :
তথ্যভিত্তিক টিপ্স পেতে ক্লিক করুন
শর্করা ৮২.৪ গ্রাম, চিনি ৮২.১২
গ্রাম, খাদ্য ফাইবার ০.২ গ্রাম, প্রোটিন ০.৩ গ্রাম, রিবোফ্লাভিন বি২ ০.০৩৮
মিঃগ্রাম, ন্যায়েসেন বি৪ ০.১২১ মিঃগ্রাম, প্যানটোথেনিক অ্যাসিড
বি৫ ০.০৬৮ মিঃগ্রাম, ফোলেট বি৯ ২ মাইক্রোগ্রাম, ভিটামিন সি ০.৫
মিঃগ্রাম, ধাতুর মধ্যে ক্যালসিয়াম ৫ মিঃগ্রাম, লোহা ০.৪২ মিঃগ্রাম, ম্যাগনেসিয়াম
২ মিঃগ্রাম, ফসফরাস ৪ মিঃগ্রাম, পটাসিয়াম ৫২ মিঃগ্রাম, সোডিয়াম ৪ মিঃগ্রাম, দস্তা ০.২২
মিঃগ্রাম এবং অন্যান্য উপাদানের মধ্যে পানি আছে ১৭.১০ গ্রাম।
:::: মধুর স্বাস্থ্য উপকারিতা ও ব্যবহার ::::
Ø গলার স্বরযন্ত্র বা স্বরনালী ঠিক রাখতে মধুর তুলনা নেই। গলার যে কোনো
ক্ষত সারিয়ে তোলে মধু।
Ø শিশু থেকে বৃদ্ধ সকলের সর্দি কাশি, ঠান্ডা সারাতে মধু অনন্য নিয়ামত।
Ø চোখের দৃষ্টি শক্তি বাড়াতে মধু খুব কার্যকর।
Ø ভিটামিনের অভাবে মুখে ঘা হলে বা মাড়িতে প্রদাহ হলে মধু জলে কুলি করলে
ভাল হয়ে যায়।
Ø দাঁতের ক্ষয়রোধ, দাঁতের মাড়ি সূস্থ্য রাখতে, দাঁতে পাথর জমাট বাঁধা রোধ
করতে মধুর জুড়ি মেলা ভার।
Ø মধুতে থাকা ক্যালসিয়াম দাঁত, হাড়, চুলের গোঁড়া, নখের সৌন্দর্য বৃদ্ধি
ও ভেঙে যাওয়া রোধ করে।
Ø নিয়মিত মধু খেলে গ্যাস্ট্রিক আলসারের যন্ত্রণা থেকে মুক্তি মেলে।
Ø হাঁপানি রোগের ভাল চিকিৎসক মধু। হাঁপানি থেকে রক্ষা পেতে মধু খান।
Ø নারী পুরুষের অনেক সময় যৌন সমষ্যা দেখা দেয়, বিশেষ করে পুরুষের যৌন সমস্যা
বা যৌন দূর্বলতায় রেহাই মিলবে মধুতে।
Ø শারীরিক ক্লান্তি ও অবসাদ দূর করতে মধুর ভূমিকা অনস্বীকার্য।
Ø পেশিশক্তি বৃদ্ধিতে মধু কার্যকরি। কারণ এতে থাকা চিনি পেশিকে কার্যক্ষম
করে তোলে।
Ø শরীরের বিভিন্ন স্থানের ব্যথা উপশমে মধুর বিকল্প হতে পারে না। বিশেষ করে
শীতকালে গাঁটে, জয়েন্টে বা বাতের ব্যথায় ভূগতে থাকা রোগীদের খুব যত্ন নেয় মধু।
Ø মধু শরীরের খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে ভাল কোলেস্টেরলের মাত্রা
বাড়িয়ে দেয়। ফলে হার্ট অ্যাটাকের আশংকা কমে যায়।
Ø মধুতে থাকা আয়রণ শরীরে লোহিত রক্ত কণিকা, শ্বেত রক্ত কণিকাসহ রক্তের বিভিন্ন
উপাদান বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
Ø নিয়মিত মধু খেলে আমাদের রক্তনালী পরিষ্কার থাকে। ফলে বিভিন্ন ধরনের রক্তনালীর
সমস্যা হওয়া কোনো শংকা থাকে না।
Ø মধু শিশুদের বুদ্ধি বৃদ্ধির জন্য কার্যকর। মানুষের স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি
ও ধরে রাখতে সাহায্য করে।
Ø খাবারের অরুচি দূর করতে মধু কার্যকর। নিয়মিত মধু খেলে সব বয়সের মানুষের
খাবারের অনীহা দূর হয়ে যাবে।
Ø গ্যাস্ট্রিক ও হজমের সমস্যা দূর করে মধু। খাবারের আগে পরে বুক গলা জ্বালা
পোড়া বদহজম এসিডিটি ইত্যাদি থেকে মুক্ত করে মধু।
Ø যাদের পেটে আমাশয় ডায়রিয়া আছে তারা মধু খাওয়ার অভ্যেস করলে দূর হয়ে যাবে।
আমদের রাসূল (সাঃ) ডায়রিয়া সমস্যায় মধু খেতেন।
Ø যারা অধিক মোটা বা ওজন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে, তারা নিয়মিত মধু খাওয়ার
অভ্যেস করলে ভাল উপকার পাবেন।
Ø শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি ও কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে রক্ষা করতে পারে
মধু।
Ø যাদের ঘুমের সমস্যা আছে বা অনিদ্রায় ভূগছেন, তারা নিয়ম করে রাতে মধু খেলে
অনিদ্রার সমস্যা দূর হয়ে যাবে।
:::: লাইফস্টাইলে মধু ::::
ü চুলের স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে মধু অতুলনীয়। সপ্তাহে ২-৩বার সমস্ত চুলে মধু
মাখলে চুলের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধিসহ নানাবিধ উপকার হবে।
ü আামদের ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে বলি রেখা দূর করতে টানটান রাখতে মধু বিশেষ
উপাদান হিসেবে বিবেচ্য।
ü বয়সের ছাপ দূর করে বয়স ধরে লাখতে মধু ব্যবহার করুন। মধুতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন
রিঙ্গেল পড়তে বাঁধা দেয়।
ü শরীরের আর্দ্রতা বাড়াতে বা আর্দ্রতাশূন্য হয়ে গেলে মধু খেলে পূরণ হয়।
ü ক্ষত স্থানে ড্রেসিং করতেও মধু ব্যবহৃত হয়। মধু দিয়ে ড্রেসিং করলে ক্ষত
স্থানের উপকার মেলে।
ü মধু আমাদের শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। যাদের শরীরে তাপমাত্রা
কম বা শীতের সময় মধু খেলে স্বস্তি পাওয়া যাবে।
বরাবরের মতই ধন্যবাদ জানাচ্ছি, “সবার জন্য ব্লগ” –এর সাথে থাকার জন্য।
নিজে জেনে অন্যকে জানাতে শেয়ার
করুন।
0 মন্তব্যসমূহ
Always stay connected with SOBAR JONNO BLOG
সবসময় যুক্ত থাকুন সবার জন্য ব্লগের সাথে।