ঘি এর ব্যবহার ও স্বাস্থ্য উপকারিতা । Ghee’s Use and Health Benefits

 

এখনো ভুল ধারণা বিদ্যমান যে, ঘি খেলে মোটা হয়ে ওজন বেড়ে যায় এবং মেদ জমে। কিন্তু সম্পূর্ণভাবে এ ধারণা মিথ্যা ও ভুল। বরং নিয়মিত পরিমাণ অনুযায়ী খাঁটি ঘি খেলে অতিরিক্ত মেদ ঝরে শরীরের ওজন কমে। শুধু তাই নয়, ত্বক সুন্দর ও মসৃণ করে বয়সের ছাপ কমিয়ে দেয়। ত্বকের বলিরেখা ও ভাঁজ পড়া দূর করতে কার্যকরী ভূমিকা রাখে এই ঘি। জেনে রাখুন ঘি সঠিকভাবে সংরক্ষণ করলে ১০০ বছরেও নষ্ট হয় না, ফ্রিজে রাখার প্রয়োজন পড়ে না। নিচে 


“ঘি এর ব্যবহার ও স্বাস্থ্য উপকারিতা (Ghee’s Use and Health Benefits)”

 নিয়ে আলোচনা করা হল :


ঘি, ঘি’র ব্যবহারবিধি, ঘি খাওয়ার নিয়ম, ঘি’র স্বাস্থ্য উপকারিতা, ঘি’র পুষ্টি উপাদান, ঘি’র প্রাকৃতিক গুণ, ঘি’র স্বাস্থ্যগুণ, ঘি’র খেয়ে সূস্থ্য থাকার নিয়ম, ঘি’র খেয়ে ত্বক সুন্দর রাখার নিয়ম
ঘি এর ব্যবহার ও স্বাস্থ্য উপকারিতা

আস্ সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ!

 

সূস্থ্য ও ভাল আছেন সবাইকে নিয়ে আশা রেখে শুরু করছি আজকের বিষয়।

আজ লিখছি, “ঘি এর ব্যবহার ও স্বাস্থ্য উপকারিতা (Ghee’s Use and Health Benefits)”

  

ঘি এর পুষ্টি উপাদান (Ghee’s Nutrients)

 

        পুষ্টিবিদ, শামীমা আফরোজ- এর তথ্য মতে; এক টেবিল চা চামচ অর্থ্যাৎ ১৫ গ্রাম ঘি থেকে পাওয়া যায়- ১৩৫ কিলোক্যালরি শক্তি, ৪৫ গ্রাম কোলেস্টেরল ও ৯ গ্রাম স্যাচুরেটেড। ঘি’য়ের মূল উপাদান চর্বি হলেও ভাল মাত্রায় ভিটামিন ‘এ’ ‘ই’ ও ‘ডি’ রয়েছে। অনেকের ধারণা, চর্বি ও ফ্যাট শরীরের জন্য অপ্রয়োজনীয় ও ক্ষতিকর কিন্তু ঘি’তে থাকা ওমেগা থ্রি ফ্যাট সব বয়সী মানুষের জন্য অত্যন্ত উপকারি। তবে মনে রাখা জরুরি সবকিছুরই নিয়ম ও পরিমাণ আছে।


হেলথটিপ্স ও লাইফস্টাইল জানুন এখান থেকে

 

কারা ঘি খেতে পারবেন না :  

ü যারা হার্টের রোগের সমস্যায় ভূগছেন।

ü যারা উচ্চ রক্তচাপে ভূগছেন।

ü যারা ডায়াবেটিস রোগে ভূগছেন।

ü যারা অতিরিক্ত ওজনের সমস্যায় ভূগছেন।

 

কতটুকু পরিমাণ ঘি খেতে হবে :

 

ü সূস্থ্য ও সবল ব্যক্তিদের নিরাপদ মাত্রা হল দিনে ২ থেকে ৩ টেবিল চামচ।

ü ১১ বছর থেকে প্রাপ্ত বয়স্করা সবার জন্য দিনে ২ থেকে ৩ টেবিল চামচ।

ü ৪ বছর থেকে ১০ বছর বাচ্চাদের জন্য দিনে ১ থেকে ২ টেবিল চামচ।

ü ২ বছর থেকে ৩ বছর বাচ্চাদের জন্য দিনে ১/২ টেবিল চামচ।

ü ১ বছর বাচ্চাদের জন্য দিনে ১/৪ টেবিল চামচ যথেষ্ট।

 

(তবে সবচেয়ে বুদ্ধিমানের কাজ হল কোনো পুষ্টিবিদের সাথে পরামর্শ করে শরীরের জন্য ঘি’য়ের পরিমাণ নির্ধারণ করা)



ঘি এর ব্যবহার (Use of Ghee) :


       

        খাবার হিসেবে ঘি : গরম ভাতে কাঁচা খাওয়ার পাশাপাশি রান্নাতে ঘি ব্যবহার হয়ে থাকে। বিশেষ করে সবজি রান্না করতে ঘি এর ব্যবহার অপরিসীম। এছাড়া সকালবেলা টোস্টের সাথে ঘি মাখিয়ে খেতে বেশি ব্যবহার হয়ে থাকে।

 

রূপচর্চায় ঘি : রাতে শোবার আগে ভাল করে মুখ ধুয়ে ১ চামচ ঘি চোখের চারপাশে আলতো করে মেখে রাখলে এটি আই ক্রিমের কাজ করে থাকে। এছাড়াও ত্বকের ময়েশ্চারাইজার হিসেবে দ্রুত কাজ করে। তাই রূপচর্চায় ঘি ব্যবহার হয়ে থাকে।

 

রাগ প্রশমনে ঘি : রাগ প্রশমনের জন্য ঘি ভাল কার্যকরি হিসেবে কাজ করে। কারণে বা অকারণে যারা রেগে যান, তারা হাতে একটু খাঁটি ঘি মেখে নাকে লাগান এবং এর ঘ্রাণ টানুন। দেখবেন ঘি এর সুগন্ধি আপনার মস্তিষ্কে যাওয়ার সাথে সাথে রাগ কমে যাবে, আপনি ভুলে যাবেন রাগের কথা। তাই রাগ প্রশমনে ঘি এর ব্যবহার হয়ে থাকে।

 

কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধে ঘি : কোষ্ঠকাঠিন্য সারাতে ঘি ব্যবহার হয়ে থাকে। ঘি’য়ে রয়েছে ন্যাচরাল লুব্রিকেটিং, যা এক ধরনের পিচ্ছিল উপাদান। এক কাপ দুধের মধ্যে এক টেবিল চামচ ঘি মিশিয়ে কিছুক্ষণ চূলাতে রেখে ঘুমাতে যাবার আগে পান করলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়ে যায়।

 

ঘি এর স্বাস্থ্য উপকারিতা (Health Benefits of Ghee) :



        ওজন কমাতে ঘি : একাধিক গবেষণায় উঠে এসেছে, ঘি’তে উপস্থিত থাকা এসেনশিয়াল অ্যামাইনো অ্যাসিড শরীরে জমে থাকা অতিরিক্ত চর্বি ঝরিয়ে ফেলে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই ওজন কমতে শুরু করে। তাই ঘি খেলে ওজন বাড়ে, একথা ভুলে গিয়ে নিয়মিত ঘি খান, কারণ ঘি’তে ওজন বাড়ে না বরং কমে।

 

    ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে ঘি : আয়ুর্বেদ শাস্ত্র প্রমাণ করেছে, ঘি হলো প্রাকৃতিক ময়েশ্চারাইজার, যা ত্বক ও ঠোঁটের হারিয়ে যাওয়া আদ্রতা ফিরিয়ে আনতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। প্রতিদিন অল্প পরিমাণের ঘি’য়ের সাথে পানি মিশিয়ে যদি মুখে লাগানো যায়, তাহলে চোখে পড়ার মতো বয়সের ছাপ কমে আসবে, সেই সাথে বলিরেখাও মিলে যাবে।

 আরো পড়ুন : স্মার্ট হতে সুন্দভাবে কথা বলতে শিখুন


    হজম শক্তির উন্নতি ঘটাতে ঘি : ঘি যেকোনো ধরনের রিচ খাবারকে হজম করতে কার্যকরী। ঘি পাকস্থলির অ্যাসিডিটির ক্ষরণ বাড়ায়, ফলে বদহজম ও গ্যাস অম্বল হওয়া থেকে রক্ষা করে। নিউট্রিশনিস্টদের মতে, খিচুড়ি বা পুরান পলির মতো খাবার খেতে ঘি খাওয়া আবশ্যক।

 

    ক্যান্সার প্রতিরোধে ঘি : ঘি’তে থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট শরীরে উপস্থিত ফ্রি রেডিক্যালদের ক্ষতি করার ক্ষমতাকে কমিয়ে দেয়। সে কারণে কোষের বিন্যাসে পরিবর্তন হয়ে ক্যান্সার সেলের জন্ম নেওয়ার আশংকা হ্রাস করে। তাই রান্নাতে ঘি খাওয়ার অভ্যেস করে ফেলুন। ঘি এর ‘স্মোকিং পয়েন্ট’ খুব হাই, অধিক তাপমাত্রায় রান্নাতেও কোনো ক্ষতি হয় না।

 

    ব্রেন টনিক হিসেবে ঘি : ঘি’তে উপস্থিত থাকা ওমেগা-৬ এবং ৩ ফ্যাটি এসিড শরীর এবং মস্তিষ্ককে চাঙ্গা রাখতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। গবেষণায় প্রমাণিত, এই দু’ধরনের ফ্যাটি এসিড ডিমেনশিয়া ও অ্যালঝাইমারসের মতো রোগের প্রকোপ কমাতে কার্যকরি ভূমিকা রাখে। নিউট্রিশনিস্টদের মতে ঘি নার্ভের কার্যক্ষমতা বাড়িয়ে সার্বিকভাবে ব্রেন পাওয়ারের উন্নতি ঘটায়, তাই ব্রেনের টনিক হিসেবে ঘি’য়ের বিকল্প হয় না।

 

    দৃষ্টিশক্তির উন্নতি ঘটাতে ঘি : নিয়মিত ঘি খেলে শরীরের সব ধরনের রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করে শরীরকে যেমন রোগমুক্ত রাখতে সহায়তা করে তেমনি মেজাজকে চাঙ্গা ও ফুরফুরে রাখে, সেই সাথে চোখের দৃষ্টিশক্তির উন্নতি ঘটায়।

 

আসুন, প্রাকৃতিকভাবে সূস্থ্য থাকতে এবং কেমিক্যালযুক্ত মেডিসিন খাওয়া থেকে বাঁচতে অন্যান্য প্রাকৃতিক খাবারের পাশাপাশি ঘি খাওয়ার অভ্যেস গড়ে তুলি। নিজে সূস্থ্য থাকি, অন্যকে সূস্থ্য রাখি

 

 

আজ রাখছি, বরাবরের মতই ধন্যবাদ জানাচ্ছি, “সবার জন্য ব্লগ” –এর সাথে থাকার জন্য। নিজে জেনে অন্যকে জানাতে শেয়ার করুন।


হেলথটিপ্স ও লাইফস্টাইল জানুন এখান থেকে


আরো পড়ুন : স্মার্ট হতে সুন্দভাবে কথা বলতে শিখুন

 

আশা করছি “ঘি এর ব্যবহার ও স্বাস্থ্য উপকারিতা (Ghee’s Use and Health Benefits)” লেখাটি কিছু তথ্য উপস্থাপন করতে পেরেছে।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ