আস্ সালামু আলাইকুম ওয়া
রাহমাতুল্লাহ!
সূস্থ্য ও ভাল আছেন সবাইকে
নিয়ে আশা রেখে শুরু করছি আজকের বিষয়।
আজ লিখছি, “মিছরির প্রস্তুত প্রণালী, পুষ্টি উপাদান ও স্বাস্থ্য উপকারিতা (Preparation of Palm Candy, Nutrients and Health Benefits)”
শুরুতেই
মিছরির উপকারিতা স্মরণ করিয়ে দিয়ে আলোচনা শুরু করতে চাচ্ছি-
আমাদের শরীরের যেসব উপকার সাধন করে মিছরি তা নিম্নরূপ :
সবধরনের হেলথটিপ্স ও লাইফস্টাইল জানুন এখানে
Ø স্মৃতিশক্তি
বৃদ্ধি করে।
Ø শ্বাস
প্রশ্বাসের সমস্যা দূর করে।
Ø শিশুদের
ব্রেইন ডেভেলপ করে।
Ø আনিমিয়ায়
কার্যকরী।
Ø কন্সটিপেশন
সারিয়ে তোলে।
Ø হাড়ের
সমস্যা রোধ করে।
Ø সর্দি
কাশি ঠান্ডায় উপশম দেয়।
Ø চোখের
দৃষ্টি বৃদ্ধি করে।
Ø কিডনির
পাথরে অপসারণে ভূমিকা রাখে।
Ø পেটের
ব্যথা দূর করে।
Ø ডায়রিয়ায়
কার্যকর ভূমিকা রাখে।
Ø শরীরের
গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণ করে।
Ø নাক দিয়ে
রক্ত পড়া বন্ধ করে।
Ø মুখের
আলসার প্রতিরোধ করে; ইত্যাদি।
আমাদের আপামর মানুষের কাছে
জনপ্রিয় ও ঔষুধে গুণে ভরপুর হিসেবে পরিচিত মিছরি। আসলেই তাই, এই মিছরি মানব দেহের
শরীরে অত্যন্ত উপকার করে থাকে। ক্ষতির কোনো সম্ভবনা নেই বললেই চলে। ২ধরনের মিছরির
সাথে আমরা পরিচিত, ১। তালমিছরি ২।চিনি মিছরি। আঁখের রস দিয়ে তৈরি হয় চিনি মিছরি আর
তালের রস দিয়ে হয় তালমিছরি।
আসলে মিছরি হচ্ছে, স্ফটিকের মতো দানাবাধাঁ চিনি। আর চিনির তৈরি বলেই মিছরির রং লালচে আভার হয়ে থাকে। তবে আমরা বাজারে ফকফকে সাদা যেসব মিছরি কিনে থাকি, সেগুলোতে হাইড্রোজ নামক রাসায়নিক পদার্থ দিয়ে সাদা করা হয়। এছাড়াও বিভিন্ন রঙ মিশিয়ে বিভিন্ন রঙের মিছরি বাজারজাত করা হচ্ছে। দুই ধরনের মিছর-ই সব বয়সের মানুষের জন্য উপকারি। তবে চিনি মিশ্রি’র চেয়ে তালমিছরির উপকার বেশি। আমার লেখাতে মূলত তালমিছরি নিয়ে আলোচনা করছি।
:::::: মিছরি প্রস্তুত প্রণালী (Paration of Palm Candy) ::::::
আঁখের রস বা খাঁটি তালের রস জ্বাল দিয়ে গুড়ে পরিণত করা হয়। নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত জ্বালানোর পর সেটিকে ঢেলে ফেলা হয় বিশেষ ধরনের ট্রে বা পাত্র-তে। তারপর প্রয়োজনমাফিক তাপমাত্রায় ট্রে গুলোকে বস্তা/চট/ছালা দিয়ে ঢেকে রাখা হয়। ঢেকে সেটাকে অবশ্যই বন্ধ ঘরে বন্দি করে রাখা হয়। সপ্তাহখানেক থাকলে গুড় দানাতে পরিণত হয়। তবে তখনও মাঝের অংশ পরিপূর্ণ শুকিয়ে যায়না। কিন্তু সে সময় সেটিকে বিশেষ কায়দায় আলাদা করে ফেলা হয়। পরে কয়েকদিনের মধ্যে পরিপূর্ণ শুকিয়ে প্রায় পাথরের মতো শক্ত হয়ে ওঠে। এভাবেই তৈরি হয়ে আমাদের পেটে চলে আসে, যা আমাদের শরীরের বিভিন্ন উপকার সাধনের পর শেষ বিদায় নেয় ল্যাট্রিনের প্যানে।
:::::: মিছরির পুষ্টি উপাদান ( Nutrients of Palm Candy ) ::::::
মিছরি খাঁটি প্রাকৃতিক উপাদান
দিয়ে তৈরি বলে মিষ্টি হওয়ার পরেও শারীরিক ক্ষতি না করে বহু উপকার সাধন করে। নিশ্চয়
জানেন, তালমিছরিকে আনপ্রসেসড সুগার বলা হয়। ব্লাড সুগার বাড়ানোর জন্য দায়ী
গ্লাইসেমিক ইনডেক্স (GI) স্বাভাবিকভাবে অন্যান্য খাদ্যে থাকে ৫৫%, কিন্তু
তালমিছরিতে মাত্র ৩৫%। তাই ডায়াবেটিসের রোগীরাও ডাক্তারের পরামর্শে তালমিছরি খেতে
পারেন।
তালমিছরিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে এসেনশিয়াল ভিটামিনস, মিনারেলস, যথা : ক্যালসিয়াম, পটাসিয়াম, জিঙ্ক, আয়রণ, ফসফরাস ইত্যাদি, আরো আছে আমাইনো অ্যাসিড। এছাড়াও অল্প লভ্য ভিটামিন বি১২ পাওয়া যায়, যা মূলত আমিষাশী খাবারে থাকে।
:::::: তালমিছরির স্বাস্থ্য উপকারিতা (Health Benefits of Palm Candy) ::::::
১। হাড়ের সমস্যায় তালমিছরি
:
শিশু থেকে বৃদ্ধ সব ধরনের বয়সের মানুষের জন্যই তালমিছরি হাড়ের
সমস্যা সমাধানে কাজ করে। প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম ও পটাসিয়াম থাকার কারণে
তালমিছরি হাড় ও দাঁতকে শক্ত ও ক্ষয় থেকে রোধ করে। মেয়েদের মেনোপজের সময়ে তালমিছরি
দারূণ উপকারি।
২। আনিমিয়ায় তালমিছরি :
তালমিছরিতে অধিক পরিমাণে আয়রণ থাকায় আনিমিয়াতে ভীষণ ভাল কাজ করে।
সাধারণভাবে আয়রণ রক্তের হিমোগ্লোবিন লেভেল ঠিক রাখে। মেয়েদের ক্ষেত্রে খুবই
প্রয়োজনীয় এই তালমিছরি।
৩। চোখের দৃষ্টি বাড়াতে
তালমিছরি :
তালমিছরির সাথে বাদাম, মৌরী এবং গোলমরিচ গুঁড়ো করে রোজ রাতে ১চামচ
করে খান, নিশ্চিতভাবে আপনার দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি পাবে।
৪। কিডনীর পাথর অপসারণে
তালমিছরি :
তালমিছরি সাথে পেঁয়াজের রস মিশিয়ে কিছুদিন সেবন করলে কিছুদিনের
মধ্যেই স্বাভাবিক কিডনি পাথর প্রসাবের সাথে বের হয়ে যায়।
৫। সর্দি কাশি ও ঠান্ডাতে
তালমিছরি :
ছোট বাচ্চা থেকে শুরু করে সব বয়সের মানুষের সর্দি কাশি ঠান্ডাতে
তালমিছরি মুখে নিয়ে চুষলে আরাম পাবে। গলার খুসখুস কাশি দূর হয়ে যাবে। এটি শ্লেষ্মা
নরম করে বের করে দিতে সাহায্য করে। ঠান্ডা লেগে কাশতে কাশতে গলা ব্যথা হয়ে গেলে
পরিমাণমত তালমিছরির সাথে ঘি আর গোলমরিচ দিয়ে পেস্ট বানিয়ে ১চামচ খেলে সাথে সাথে
উপকার পাওয়া যায়।
৬। পেটের ব্যথায় তালমিছরি
:
পাতলা পায়খানা ও পেটের ব্যথায় ভীষণ উপকারি এই তালমিছরি। ধনের গুঁড়োর
সাথে তালমিছরি গুড়ো করে খান, পাতলা পায়খানা শক্ত হয়ে যাবে। নিমপাতার সাথে তালমিছরি
খান পেটের ব্যথা উধাও হবে। গরমে হিট স্ট্রোক থেকে বাঁচতে তালমিছরি খেতে থাকুন।
৭। মুখের আলসারে তালমিছরি
:
যত কঠিন আলসার হোক, তালমিছরির সাথে এলাচ গুঁড়ো পেস্ট করে মুখের
ভেতরে লাগালে আরাম পাওয়া যায়।
৮। নাক দিয়ে রক্ত পড়ায় তালমিছরি :
যাদের নাক দিয়ে রক্ত পড়ার সমস্যা আছে তারা নাকের কাছে তালমিছরির
গুঁড়ো নিয়ে কিছু সময় শুকতে থাকুন, আরাম পাবেন।
৯। বুকের দুধ বাড়াতে তালমিছরি :
যেসব মা’য়েরা বুকের দুধ খাওয়ান, বাচ্চা যদি পরিমাণমত দুধ না পায় তবে
তালমিছরি আর কালো তিল গুঁড়ো করে গরম দুধ দিয়ে দিনে ২বার খান, আপনার সুন্দর
ব্রেস্ট-এ দুধ উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে।
১০। কন্সটিপেশনে তালমিছরি
:
তালমিছরি যেহেতু চিনি বা মধুর তুলনায় কম পরিমাণ কার্বোহাইড্রেট তৈরি
করে সেহেতু শরীরকে সতেজ রাখে, যার ফলে ক্লান্ত হয়ে পড়তে হয় না। এতে ডায়েটারি
ফাইবারের আধিক্যের কারণে হজমে সাহায্য করে এবং কন্সটিপেশন সারিয়ে তোলে।
সবধরনের হেলথটিপ্স ও লাইফস্টাইল জানুন এখানে
১১। মাথা ব্যথায় তালমিছরি
:
অনেক মানুষই আছেন, যাদের সাইনাস বা চোখের জন্য মাথা ব্যথা সমস্যায়
ভোগেন, তারা আদা রসের সাথে কিংবা তুলসি পাতা ও গোটা মরিচের সাথে তালমিছরি খান, ভাল
ফল পাবেন।
১২। শিশুদের ব্রেইন ডেভেলপে
তালমিছরি :
তালমিছরিতে নানান ধরনের প্রাকৃতিক স্বাস্থ্য উপাদান থাকায় বাচ্চাদের
ব্রেইন গঠনে ও বুদ্ধি বাড়াতে তালমিছরি সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
১৩। ডায়রিয়া নিয়ন্ত্রণে
তালমিছরি :
আমরা ডায়রিয়াতে পড়লে বারবার পাতলা পায়খানা (পেছন দিয়ে কুলি হওয়া) ও
বমি হওয়ার কারণে শরীর থেকে ইলেক্ট্রোলের ঘাটতি দেখা দেয়। তাই তালমিছরির শরবত
আপানার দূর্বলতা কাটিয়ে শরীরের পানি শূন্যতা পূরণ করবে।
১৪। গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণে
তালমিছরি :
তালমিছরিতে থাকা গ্লাইসেমিক ইন্ডেক্স ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে রাখে।
কারণ চিনি ও মধুর তুলনায় কম থাকে। তাই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে তালমিছরি উপকারি।
যেগুলোর ব্যাখ্যা দিলাম এর বাইরেও শুরুতে উল্লেখিত সমস্ত শারীরিক
সমস্যা সমাধান করে।
তাই বিধাতার
এই রহমত খাওয়ার অভ্যেস গড়ুন, রোগমুক্ত সু-স্বাস্থ্য গড়ুন।
আজ রাখছি, বরাবরের মতই ধন্যবাদ
জানাচ্ছি, “সবার জন্য ব্লগ” –এর সাথে থাকার জন্য। নিজে জেনে অন্যকে জানাতে শেয়ার
করুন।
সবধরনের হেলথটিপ্স ও লাইফস্টাইল জানুন এখানে
0 মন্তব্যসমূহ
Always stay connected with SOBAR JONNO BLOG
সবসময় যুক্ত থাকুন সবার জন্য ব্লগের সাথে।