তেঁতুলের পুষ্টিগুণ ও এর উপকারিতা ও অপকারিতা । The Nutritional Value of Tamarind and its Advantages and Disadvantages

 

সূস্থ্য ও ভাল আছেন সবাইকে নিয়ে আশা রেখে শুরু করছি আজকের বিষয়।

আজ লিখছি, “তেঁতুলের পুষ্টিগুণ ও এর উপকারিতা এবং অপকারিতা (The Nutritional Value of Tamarind and its Advantages and Disadvantages)”


সবধরনের হেলথটিপ্স ও লাইফস্টাইল জানুন এখানে

তেঁতুল (Tamarind) :

 

তেঁতুল খাওয়ার নিয়ম, তেঁতুলের স্বাস্থ্য উপকারিতা, তেঁতুলের পুষ্টি উপাদান, তেঁতুলের প্রাকৃতিক গুণ, তেঁতুলের স্বাস্থ্যগুণ, তেঁতুল খেয়ে সূস্থ্য থাকার নিয়ম, তেঁতুলের প্রাকৃতিক স্বাস্থ্যগুণ
তেঁতুলের পুষ্টিগুণ ও এর উপকারিতা ও অপকারিতা । The Nutritional Value of Tamarind and its Advantages and Disadvantages

আমি নিশ্চিত আপনি যখন তেঁতুল নামটি মনে করেছেন, সাথে সাথে আপনার জিহ্বাতে জল এসেছে। যেহেতু তেঁতুল নিয়ে জানার চেষ্টা করছেন এখনও আপনার জিহ্বাতে জল টলমল করছেই। ভেবে দেখুন সৃষ্টিকর্তার কি নিয়ামত আর কি কেরামতি যে, এমন একটি ফল যে নাম নিলেই বা নাম শুনলেই চোখের সামনে থাকুক বা না থাকুক আর আপনি খেতে ভালবাসেন বা নাই বাসেন জিহ্বা সাড়া দিবেই।

একটা প্রচলিত কথা আছে, তেঁতুল খেলে নাকি শরীরের রক্ত পানি হয়ে যায়। এটা নিছক কাউকে না খাওয়ার উৎসাহ দিতেই এমন কথা বলা হয়। আসল সত্য, তেঁতুলে থাকা ঔষুধী গুণ, পুষ্টি উপাদান মানব দেহের শরীরের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।

 

    তেঁতুল-কে বাংলায় তিন্তিড়ী নামেও ডাকা হয়। এর ইংরেজি নাম : Melanesian papeda ও Tamarind. বৈজ্ঞানিক নাম : Tamarindus indica. তেঁতুল একপ্রকার টক জাতীয় ফল বিশেষ। পাকা তেঁতুল টক মিষ্টি হয়ে থাকে।


সবধরনের হেলথটিপ্স ও লাইফস্টাইল জানুন এখানে

 

জানব, তেঁতুলের পুষ্টি উপাদান ও পুষ্টিগত মান (Tamarind nutrients and nutritional value) :

 

    তেঁতুলে রয়েছে উচ্চমাত্রার অ্যাসিড, চিনি, ভিটামিন বি এবং অদৃশ্য ক্যালসিয়াম।

প্রতি ১০০ গ্রাম (৩.৫ আউন্স) কাঁচা তেঁতুলের পুষ্টিগত মান নিম্নরূপ :

        খাদ্য শক্তি ২৩৯ কিলোক্যালরি, খাদ্য ফাইবার ৫.১ গ্রাম, চিনি ৫৭.৪ গ্রাম, স্নেহ ০.৬ গ্রাম, প্রোটিন ২,৮ গ্রাম, ভিটামিন এ ২ মাইক্রোগ্রাম, ভিটামিন সি ৩.৫ মিলিগ্রাম, ভিটামিন ই ০.১ মিলিগ্রাম, ভিটামিন কে ২.৮ মাইক্রোগ্রাম, থায়ামিন বি০.৪২৮ মিঃগ্রাঃ, রিবোফ্লাভিন বি০.১৫২ মিঃগ্রাঃ, ন্যায়েসেন বি১.৯৩৮ মিঃগ্রাঃ, প্যানটোথেনিক অ্যাসিড বি০.১৪৩ মিঃগ্রাঃ, ভিটামিন বি ০.০৬৬ মিঃগ্রাঃ, ফোলেট বি১৪ মাইক্রোগ্রাম, কোলিন ৮.৬ মিঃগ্রাঃ, ক্যালসিয়াম ৭৪ মিঃগ্রাঃ, ম্যাগনেসিয়াম ৯২ মিঃগ্রাঃ, ফসফরাস ১১৩ মিঃগ্রাঃ, লোহা ২.৮ মিঃগ্রাঃ, পটাসিয়াম ৬২৮ মিঃগ্রাঃ, সোডিয়াম ২৮ মিঃগ্রাঃ, দস্তা ০.১ মিঃগ্রাঃ এবং অন্যান্য উপাদানের মধ্যে পানি আছে ৩১.৪০ গ্রাম।

 

জেনে রাখি, তেঁতুলের ঔষুধী গুণ (Medicinal properties of tamarind) :

সবধরনের হেলথটিপ্স ও লাইফস্টাইল জানুন এখানে 

তেতুঁলে টারটারিক অ্যাসিড থাকায় খাবারে হজমে সহায়তা করে। রক্তে কোলেস্টেরল কমানোর কাজে আধুনিক চিকিৎসায় তেঁতুল র্ববহৃত হচ্ছে। পেটের বায়ু, হাত-পা জ্বালা পোড়ায় তেঁতুলের শরবত খুব কার্যকরী। জ্বরে ভোগা রোগীর জ্বর কমানোর জন্য তেঁতুল ব্যবহৃত হয়।

    উচ্চ রক্তচাপ বা হাইপ্রেসারে তাৎক্ষণিক উপশম দিতে পারে কাঁচা বা পাকা তেঁতুল। পাকা তেঁতুল ভিজিয়ে রেখে সকালে ভেজানো পানি খেলে হাত পা’য়ের জ্বালা পোড়া চলে যায়। এছাড়াও স্কেলিটাল ফ্রুরোসিস (skeletal fluorosis) রোগের প্রকোপ কমাতে এই ফলটি ব্যবহৃত হয়।

   

- তেঁতুলের উপকারিতা ও অপকারিতা (Advantages and Disadvantages of Tamarind) -

 

উপকারিতা :

সবধরনের হেলথটিপ্স ও লাইফস্টাইল জানুন এখানে

 

    ১। ক্যান্সার রোধে তেঁতুল : তেঁতুলে উচ্চ মাত্রায় অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট থাকায় কিডনি ফেলিওর ও ক্যান্সার রোধে সহায়ক ভূমিকা রাখে।

 

    ২। ক্ষত সারাতে তেঁতুল : তেঁতুল গাছের পাতা এবং গাছের বাকল অ্যান্টি সেপটিক এবং অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল। এটি মানবদেহের ক্ষত সহজে সারিয়ে তোলে।

 

    ৩। ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধিতে তেঁতুল : আমাদের ত্বককে ক্ষতি করে আলট্রা ভায়োলেট রে। তেঁতুলে থাকা উপাদান আলট্রা ভায়োলেট রে থেকে আমাদের ত্বককে রক্ষা করে, ফলে আমাদের ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায় এবং ব্রণের উপদ্রব কমিয়ে দেয়। এছাড়াও তেঁতুলে থাকা হাইড্রক্সি অ্যাসিড ত্বকের মরা কোষ তুলে ফেলতে সাহায্য করে।

 

    ৪। ঠান্ডা প্রতিরোধে তেঁতুল : তেঁতুলে উপস্থিত থাকা ভিটামিন ‘সি’ যেমন শরীরের ইমিউনিটি বাড়ায় তেমনি antihistaminic properties ঠান্ডাজনিত রোগ হওয়া থেকে মুক্ত রাখে।

 

    ৫। লিভারের সুরক্ষায় তেঁতুল : গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত মদ্যপানের ফলে ড্যামেজ লিভার তেঁতুল পাতা ব্যবহারের ফলে আশানুরূপ ফল পাওয়া গেছে, সেরে ওঠে অনেকটা। তাই তেঁতুল নিঃসন্দেহে আমাদের লিভারকে সুরক্ষিত রাখে।

 

    ৬। হজম শক্তি বৃদ্ধিতে ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে তেঁতুল : তেঁতুলে রয়েছে টারটারিক অ্যাসিড, ম্যালিক অ্যাসিড ও পটাসিয়াম যা কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে হজম শক্তির উন্নতি ঘটায়। পেটের ব্যথা ও কোষ্ঠকাঠিন্য যন্ত্রণার সমাধানের জন্য তেঁতুলের সাহায্য নিন। তেঁতুল গাছের ছাল ও শিকড় পেটের ব্যথা সারাতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। আয়ুর্বেদ চিকিৎসায় ডায়রিয়া সারাতে তেঁতুল ব্যবহৃত হয়।

 

    ৭। ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে তেঁতুল : তেঁতুলে উপস্থিত থাকা flavonoids and polyphenols ওজন কমাতে সাহায্য করে। এছাড়াও hydroxycitric acid খিদে কমায়। গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতিদিন তেঁতুল খেলে ওজন কমে, কারণ এতে রয়েছে উচ্চমাত্রায় ফাইবার যা সম্পূর্ণ ফ্যাট ফ্রি।

 

    ৮। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে তেঁতুল : তেঁতুলে উপস্থিত রয়েছে এক ধরনের এনজাইম যার নাম alpha-amylase, এটা রক্তে চিনির মাত্রা কমায়। তেঁতুলের বীজ ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে।

 

    ৯। হার্ট ভাল রাখতে তেঁতুল : ইহাতে উপস্থিত থাকা ফ্ল্যাভরনয়েড খারাপ কোলেস্টেরল কমায় ও রক্তে ট্রাইগ্লিসারাইড নামক ফ্যাট জমতে বাঁধা সৃষ্টি করে। তাই তেঁতুলকে হার্ট ফ্রেন্ডলি বলা হয়।

 

    ১০। পেপটিক আলসার রোধে তেঁতুল : তেঁতুলে উপস্থিত থাকা পলিফেনলিক কম্পাউন্ড আলসার সারিয়ে তোলে। পেপটিক আলসার খুবই বেদনাদায়ক, এটি সাধারনত পেটে এবং ক্ষুদ্রান্তে হয়। রিচার্সে উঠে এসেছে, নিয়মিত তেঁতুল বীজের গুঁড়ো খেলে পেপটিক আলসার সেরে যায়।  

 

 

অপকারিতা :

সবধরনের হেলথটিপ্স ও লাইফস্টাইল জানুন এখানে

 

Ø কিছু ঔষধ আছে সেসব ঔষধ সেবনের সাথে তেঁতুল খেলে শরীরের মারাত্মক ক্ষতি করবে।

যেমন : অ্যাসপিরিন, ইবুপ্রোফেন, ন্যাপ্রোক্সিন এর মতো নন-স্টেরয়ডাল অ্যান্টিইনফ্লামেটরি ড্রাগ, অ্যান্টি-প্লাটিলেগ ড্রাগ ও রক্ত পাতলা করার মেডিসিন, যেমন : হেপারিন, ওয়ারফেরিন ইত্যাদি। তাই যারা তেঁতুল খেতে অভ্যস্ত ঔষধ সেবনের সময় ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

Ø মাত্রাতিরিক্ত তেঁতুল খেলে রক্তের সিরাম গ্লুকোজের মাত্রা কমে গিয়ে হাইপোগ্লাইসেমিয়া হতে পারে। তাই পুষ্টিবিদদের পরামর্শ, প্রতিদিন ১০ গ্রামের বেশি তেঁতুল না খাওয়ার। ডায়াবেটিস রোগীরা অবশ্যই তেঁতুল খেতে সাবধানতা অবলম্বন করবেন।

Ø তেঁতুলের প্রভাবে অ্যালর্জির সমস্যা দেখা দিতে পারে। কিছু মানুষের মধ্যে র‌্যাশ, চুলকানি, ইনফ্লামেশন, অজ্ঞান হওয়া, বমি ও শ্বাসকষ্ট হওয়ার লক্ষণ দেখা দেয়। তাই তেঁতুল খেলে যাদের এইসব অসুবিধা মনে হবে, তারা ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন।

Ø তেঁতুলে রয়েছে উচ্চ মাত্রায় এসিড। তাই নিয়মিত মাত্রাতিরিক্ত তেঁতুল খেলে শরীরের ক্ষতি হওয়ার পাশাপাশি দাঁতের এনামেল নষ্ট হয়ে যায়।

Ø ভারতীয় গবেষকরা প্রমাণ দিয়েছেন যে, বেশি পরিমাণে তেঁতুল খেলে পিত্তথলিতে পাথর সৃষ্টি হয়। ফলে জন্ডিস, তীব্র জ্বর, পেট ব্যথা, বমি বমি ভাব, লিভার ও পরিপাকতন্ত্রের সমস্যা হতে পারে।

 

বিঃদ্রঃ (শুধু তেঁতুল নয়, পৃথিবীতে সব জিনিসের-ই স্বল্পতা যেমন আপনাকে উপকৃত করবে না তেমনি মাত্রাতিরিক্তও আপনাকে ক্ষতি করবে, তাই প্রয়োজনমাফিক গ্রহণ ও বর্জন করুন)

 

সবধরনের হেলথটিপ্স ও লাইফস্টাইল জানুন এখানে

 

বরাবরের মতই ধন্যবাদ জানাচ্ছি, “সবার জন্য ব্লগ” –এর সাথে থাকার জন্য।

নিজে জেনে অন্যকে জানাতে শেয়ার করুন।

 

আশা করছি “তেঁতুলের পুষ্টিগুণ ও এর উপকারিতা এবং অপকারিতা (The Nutritional Value of Tamarind and its Advantages and Disadvantages)” লেখাটি কিছু তথ্য উপস্থাপন করতে পেরেছে।


ধন্যবাদান্তে;


    অধ্যক্ষ, মাস্টার ট্রেইনার, লেখক ও ফ্রিল্যান্সার


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ