সূস্থ্য ও ভাল আছেন সবাইকে
নিয়ে আশা রেখে শুরু করছি আজকের বিষয়।
আজ লিখছি, “মিষ্টি দই ও টক দই খাওয়ার নিয়ম ও স্বাস্থ্য উপকারিতা (Rules and Health Benefits of Eating Sweet Yogurt and Sour Yogurt)”
![]() |
মিষ্টি দই ও টক দই খাওয়ার নিয়ম ও স্বাস্থ্য উপকারিতা |
শুরুতেই জানব- - দইয়ের পুষ্টি উপাদান (Nutrition of Yogurt) -
ছোট
থেকে বড় যেকোনো অনুষ্ঠানে দইয়ের ইজ্জত আলাদা। খাওয়া শেষে দই না হলে কেমন জানি
অপূর্ণতা থেকেই যায়। শুধু তাই নয়, সে অনুষ্ঠান বা খাবারের আসর যেনো পজেটিভ
বৈশিষ্ট্য হারায়। দইয়ের প্রচলন খুব প্রাচিনকাল থেকেই। প্রায় ৪৫০০ বছর ধরে চলে আসছে
দইয়ের সমাদর। এটি একজাতীয় দুগ্ধ জাতীয় খাবার, যা দুধের ব্যাক্টেরিয়া গাঁজন থেকে
তৈরি করা হয়। ল্যাক্টোজেন গাঁজনের মাধ্যমে ল্যাক্টিক এসিড উৎপন্ন হয়। এই এসিড
দুধের প্রোটিনের উপর কাজ করে দইয়ের স্বাদ ও বিশেষ গন্ধ বাড়িয়ে তোলে। গবেষণায়
প্রমাণিত নিয়মিত দু’বেলা দই খেলে মানুষের গড় আয়ু বৃদ্ধি পায়। উদাহরণ হিসেবে রাশিয়া
অন্যতম দৃষ্টান্ত।
এক কাপ দই আমাদের শরীরের প্রতিদিনের চাহিদা থেকে ১২% ম্যাগনেসিয়াম, ১৮% পটাসিয়াম ও ৩৮% ফসফরাসের
চাহিদা মিটিয়ে থাকে। এই খনিজ পদার্থগুলো আমাদের বিভিন্ন জৈবিক প্রক্রিয়ার জন্য
প্রয়োজনীয় কাজ করে;
যেমন : রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ, বিপাক ও হাড়ের স্বাস্থ্য নিয়ন্ত্রণ
করে থাকে। দইয়ে শারীরিক সহায়ক পুষ্টি উপাদান বেশি থাকায় দুধের চেয়ে দই-কে পুষ্টিকর
খাদ্য হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
তবে
দইয়ের প্রকারভেদ রয়েছে। প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন বি ও খনিজ পদার্থ সমৃদ্ধ দই
প্রণালীর উপকরণ এক নয়। যেমন : গরুর দুধের দই, ছাগলের দুধের দই, নারিকেলের দুধের
দই, প্রোটিন সমৃদ্ধ দই ও গ্রীক ইয়োগার্ট। সেইসাথে বাজারে অনেক ফ্লেভারের দই পাওয়া
যায়। আম, স্ট্রবেরি, ব্লুবেরি, পিচ, কিউয়ি, ভ্যানিলা ইত্যাদি স্বাদে।
নিত্যনতুন হেলথটিপ্স ও লাইফস্টাইল জানুন এখানে
প্রতি ১০০ গ্রাম (৩.৫ আউন্স) পূর্ণ
ননীযুক্ত দইয়ে পুষ্টি উপাদান নিম্নরূপ :
খাদ্যশক্তি
৬১ কিলোক্যালরি, শর্করা ৪.৭ গ্রাম, সুসিক্ত স্নেহ পদার্থ ২.১ গ্রাম, এককঅসুসিক্ত
০.৯ গ্রাম, প্রোটিন ৩.৫ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ১২১ মিলিগ্রাম, রিবোফ্লাভিন ০.১৪
মিলিগ্রাম।
জানাবো, - দই খাওয়ার নিয়ম (Rules for eating yogurt) –
লাঞ্চ ও ডিনারের শেষে দই খেতে পারেন। খাওয়ার
সময় মূল খাবারের সাথে দই খাওয়া যেতে পারে। কারণ দই খাদ্য হজমে সাহায্য করে। এছাড়া
বেশি পরিমাণ দইয়ের মধ্যে সালাদ মিশিয়ে বেশি করে খাওয়া যেতেই পারে। আবার মাছ গোস্ত
দই দিয়ে রান্না করলে বা ম্যারিনেট করার জন্য দই ব্যবহার করলে তা যেমন স্বাদ বাড়িয়ে
তুলবে, সেই সাথে হজমের জন্য ভাল কাজ করবে। সব মিলিয়ে একজন সূস্থ্য মানুষ
স্বাভাবিকভাবে গড়ে প্রতিদিন ৩০০ থেকে ৪০০ মিলিগ্রাম দই অনায়াসে গ্রহণ করতে পারেন।
তবে, স্বাস্থ্যবীদদের পরামর্শ মতে, রাতে দই না খাওয়ায় ভাল।
ঃ- টক দই ও মিষ্টি দই এর স্বাস্থ্য উপকারিতা (Health Benefits of Sweet & Sour yogurt) –ঃ
টক দই (Sour yogurt) :
টক
দই থেকে ভাল উপকার পেতে চিনিমুক্ত গ্রিক ইয়োগার্ট বেছে নিন। যারা ল্যাকটোজ
ইনটলারেন্ট বা দুধ পছন্দ করেন না বা হজম করতে পারেন না, তাদের জন্য টক দই বিশেষ
কার্যকরী। যেহেতু দুধের ল্যাকটোজকে ল্যাকটিড অ্যাসিডে রূপান্তর করা হয়, তাই টক দই
হজম হতে অসুবিধা হয় না।
টক
দই বা গ্রিক ইয়োগার্টে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন থাকে। এটি শরীরের মাংসপেশী গঠনে
ভূমিকা রাখে। যারা ওজন কমাতে চান, তাদের জন্য টক দই খুব উপকারি। প্রতিদিন টক দই
খেলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেড়ে রোগ বলাই দূর হয়। এবং টক দইয়ে থাকা উপকারি
ফ্যাট আপনার হৃদযন্ত্রকে ভাল রাখবে।
মিষ্টি দই (Sweet yogurt) :
মিষ্টি
দইয়ে থাকা ক্যালসিয়াম, আয়রণ, পটাসিয়াম, ভিটামিন বি৬ পাকস্থলি সহজে
গ্রহণ করতে পারে। তাই ভাল হজমের জন্য মিষ্টি দই খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন
পুষ্টিবিদরা। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ব্যাকটেরিয়া, যা বদহজম, কোষ্ঠকাঠিন্য ও
অ্যাসিডিটি দূর করে সহজে। এছাড়াও মিষ্টি দইয়ে আছে বেশি পরিমাণে
অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট।
আমরা
যেহেতু নানান ধরনের খাবার খেয়ে থাকি। আর বিভিন্ন ধরনের খাবার পাকস্থলি হজম করতে
হিমশিম খেয়ে যায়, তাই দই খেলে হজম হওয়ার পাশাপাশি মানব দেহের পাকস্থলি ঠান্ডা
থাকে। তাছাড়াও মিষ্টি দই নিয়মিত খেলে ত্বক ও চুলের সমস্যা থেকে রেহাই পাওয়া যায়।
(অতএব, বুঝতেই পারছেন, টক দই বলেন আর মিষ্টি
দই বলেন, উভয়েই স্বাস্থ্য উপকারিতা বিদ্যমান। শুধু নিজের শারীরিক অবস্থা বুঝে
পরিমাণমত গ্রহণ করলেই উপকৃত হওয়া যাবে। কোনো কিছু যেমন অতিরিক্ত গ্রহণ ক্ষতিকর
তেমনি না জেনে না বুঝে বর্জন করাও ঠিক না)
জানাবো, কাদের জন্য দই খাওয়া মানা (For whom it is forbidden to eat yoghurt)
Ø দইয়ে
থাকা প্রোটিনে কারো যদি এলার্জির সমস্যা হয় তবে তার জন্য দই না খাওয়া ভাল।
Ø ডায়াবেটিস
রোগীরা চিকিৎসকের অনুমতি ছাড়া দই খাবেন না, কারণ দইয়ে ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস থাকে।
যেহেতু সুগারের রোগীদের ক্যালরি মেপে খেতে হয় সেহেতু অতিরিক্ত দই নিশ্চিতভাবে
ক্ষতি করবে।
Ø ক্রনিক
কিডনি ডিজিজ এর রোগীরা দই থেকে সাবধান থাকবেন, কারণ দইয়ে থাকা ক্যালসিয়াম অতিরিক্ত
হলে এই রোগীদের ক্ষতি হবে।
(মনে করিয়ে দিতে চাই, দই কিন্তু সুষম খাদ্য নয়; একমাত্র দুধ ছাড়া
কোনো খাদ্যতেই শরীরের সমস্ত প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান নেই। তাই শুধু দই খেয়ে জীবন
ধারণ করার চিন্তা বোকামী হবে।)
পরিবারের সবাইকে নিয়ে দই খাওয়ার অভ্যেস গড়ুন এবং পুষ্টিগুণে সূস্থ্য
থাকুন।
নিত্যনতুন হেলথটিপ্স ও লাইফস্টাইল জানুন এখানে
বরাবরের মতই ধন্যবাদ জানাচ্ছি,
“সবার জন্য ব্লগ” –এর সাথে থাকার জন্য।
নিজে জেনে অন্যকে জানাতে শেয়ার
করুন।
0 মন্তব্যসমূহ
Always stay connected with SOBAR JONNO BLOG
সবসময় যুক্ত থাকুন সবার জন্য ব্লগের সাথে।