চিন্তামুক্ত থাকতে খাওয়ার নিয়ম মেনে ভাত খান । Eat Rice According to the Rules of Eating to Stay Tension Free

 

আস্ সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ!

 

সূস্থ্য ও ভাল আছেন সবাইকে নিয়ে আশা রেখে শুরু করছি আজকের বিষয়।

আজ লিখছি, “চিন্তামুক্ত থাকতে খাওয়ার নিয়ম মেনে ভাত খান (Eat Rice According to the Rules of Eating to Stay Tension Free)”


ভাতের স্বাস্থ্য উপকারিতা, ভাতের অপকারিতা, ভাত খাওয়ার সঠিক নিয়ম, ভাতের পুষ্টি উপাদান, ভাতের প্রাকৃতিক গুণ, ভাতের স্বাস্থ্যগুণ, ভাত খেয়ে সূস্থ্য থাকার নিয়ম
চিন্তামুক্ত থাকতে খাওয়ার নিয়ম মেনে ভাত খান


 

 যদি আপনি বাঙালি হন, তবে-তো ভাত খাওয়া যাবেনা এমন কথা আপনার সামনে উচ্চারণ করাটাই বাহুল্য; কারণ ‘মাছে ভাতে বাঙালি’ এ কথাটা সার্বজনীন স্বীকৃত। তাই আপনার যত ইচ্ছে হয় ভাত খান, শুধু নিয়ম মেনে খান তাহলেই মেদ বৃদ্ধি, অস্বস্তি বা অন্য কোনো আশংকা থেকে চিন্তামুক্ত থাকতে পারবেন। নিচে নিয়মসহ কিছু প্রয়োজনীয় টিপ্স শেয়ার করছি।

 

::: কোন কোন সময় নাস্তা বা খাবার খাওয়া উচিৎ প্রথমেই সেদিকে চোখ রাখি :::

 

Ø সকালের নাস্তা : ঘুম থেকে উঠে আধা ঘন্টার মধ্যে নাস্তা সেরে নিন। আদর্শ সময় হচ্ছে, সকাল ৭টা। খুব বেশি দেরি হলে ১০টার বাইরে যাবেন না। অবশ্যই সকালের নাস্তায় প্রোটিন জাতীয় খাবার রাখবেন।

Ø দুপুরের খাবার বা লাঞ্চ : মনে রাখবেন সকালের নাস্তা থেকে দুপুরের খাবারের মাঝে ৪ঘন্টা বিরতি থাকতে হবে। সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে ১২.৩০টা থেকে ১.০০টার মধ্যে খেয়ে নিন, কোনো কারণে দেরি হয়ে গেলে অবশ্যই ৪টার মধ্যে খেয়ে নিতে হবে।

Ø রাতের খাবার : রাত ১০টার পরে রাতের খাবার একদমই খাওয়া ঠিক না। অবশ্যই ঘুমোতে যাওয়ার ৩ঘন্টা পূর্বে রাতের খাবার বা ডিনার সেরে নিতে হবে। আন্তর্জাতিক নিয়মে সন্ধ্যা ৬.৪৫ থেকে ৭.১৫ এর মধ্যে রাতের খাবার খাওয়ার আদর্শ সময়।

 

:::: ভাত খাওয়ার নিয়ম (Rules of Eating Rice) ::::

        ১। পেট ভরে ভাত খাবেন না : সকালে ভারি বা বেশি করে খেয়ে নিন। কিন্তু দুপুরে পেট ভরে খাওয়া যাবে না। দুপুরে হালকা খাবার খেতে হবে। রাতের বেলায় নিয়ম মেনে মাঝামাঝি খাবার গ্রহণ করুন। যাদের বেশি খিদে লাগে বা বারবার খাওয়ার অভ্যেস আছে আপনারা বারবার খান, তবে অল্প অল্প করে, অবশ্যই পেট ভর্তি করে না।

 

২। খেতে খেতে পানি পান করবেন না : খাওয়ার আগে পানি পান করে নিন। অথবা খাবারের ১৫ থেকে ৩০ মিনিট পরে পানি পান করুন। খাবারের মাঝে পানি পান করলে হজমে ব্যঘাত ঘটে।

 

৩। খাওয়ার পরেই শোবেন না : ভারি খাবার খাওয়ার পরে যদিও শরীরে ক্লান্তিভাব বা অলসতা ভর করে, কিন্তু কিছুতেই ভারি খাবার শেষে শোয়া বা বসে থাকা যাবে না। স্বাভাবিক কাজে মনযোগী হতে হবে।

 

৪। খাওয়ার পরপরই হাঁটবেন না : ব্যায়াম করার আগে বা খাওয়ার পরপরই হাঁটাহাঁটি করা যাবে না।

 

৫। ফল খেয়ে পানি পান করবেন না : আমাদের পাকস্থলির স্বাভাবিক কার্যক্রম যেনো ব্যহত না হয় সেজন্য ফল খাওয়ার পরে পানি পান করা যাবেনা। ফল খেয়ে পানি পান করলে হজমের অসুবিধা হয়ে অ্যাসিডিটির সমস্যা হয়।

 

৬। ভরা পেটে চা নয় : আমাদের অনেকেরই অভ্যেস আছে ভরপুর খাবার খেয়ে চা পান করে থাকি। মারাত্মক ভুল এটা। সকালের নাস্তা বা ভাত খাওয়ার পরে সাথে সাথে চা পান করলে কিডনির সমস্যা হয়। তাই কমপক্ষে ২০ থেকে ৩০ মিনিট পর চা পান করুন।

প্রয়োজনীয় হেলথটিপ্স ও লাইফস্টাইল পড়ুন এখানে

 

৭। অ্যাসিডিটি সমস্যায় দুধ না : চিকিৎসকদের মতে, গ্যাস্ট্রিক বা আলসার জাতীয় সমস্যাতে দুধ পান করার ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। অনেকেই মনে করেন অ্যাসিডিটি বা আলসারে দুধ পান করলে বুকের জ্বালাপোড়া কমে, আসলে একদমই ভুল ধারণা।

 

৮। ইসবগুল অনেকক্ষণ ভিজিয়ে খাবেন না : খেয়াল করলে দেখবেন, প্রায় মানুষই আমরা সারারাত বা ঘন্টার ঘন্টা ধরে ইসবগুল বা ইসবগুলের ভূষি ভিজিয়ে রেখে তারপর খেয়ে থাকি। কিন্তু সঠিক নিয়ম হচ্ছে, রাতের খাবার শেষে পানি দিয়ে ভিজিয়ে সাথে সাথে খেয়ে ফেলতে হবে।

 

৯। সময় ছাড়া খাবেন না : জীবনকে সুন্দর সু-স্বাস্থ্যময় করে তুলতে অবশ্যই আপনাকে খাওয়ার জন্য নিয়ম অনুযায়ী রুটিন মেনেই খেতে হবে। সকালের নাস্তা ৯টা থেকে ১০টার পর না, দুপুরের খাবার ১টার পরে না এবং রাতের খাবার ৯টা থেকে ১০টার পরে না।

 

::: আসুন জেনে রাখি খাবার খাওয়ার কিছু সুন্নতি বিধান :::

প্রয়োজনীয় হেলথটিপ্স ও লাইফস্টাইল পড়ুন এখানে 

রাসুলে পাক(সঃ) খাবার খাওয়ার ব্যাপারে কিছু নির্দেশনা দিয়েছেন-

 

Ø হাত ভালভাবে ধুয়ে খাওয়া শুরু করা।

Ø খাবার গ্রহণের শুরুতে বিসমিল্লাহ বলে শুরু করা।

Ø বিসমিল্লাহ বলতে ভুলে গেলে ‘বিসমিল্লাহি আওয়ালাহু ওয়া আখিরাহ’ বলা।

Ø দস্তখানা বিছিয়ে খাবার খাওয়া।

Ø ডান হাত দিয়ে খাবার খাওয়া।

Ø পাত্রের সব খাবার খাওয়া ও হাত এবং আঙ্গুল চেটে খাওয়া।

Ø পড়ে যাওয়া খাবার তুলে খাওয়া।

Ø খাবারের দোষ-ত্রুটি না ধরা।

Ø হেলান দিয়ে না খাওয়া।

Ø খাবারে ফুঁ না দেওয়া।

Ø খাবার শেষে হাত ধোয়।

Ø খাওয়া শেষ হলে আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া আদায় করা অর্থ্যাৎ দোয়া পড়া, সম্পূর্ণ দোয়া (“আলহামদুলিল্লাহি হামদান কাসিরান ত্বয়্যিবান মুবারাকান ফিহি, গায়রা মাকফিইন, ওয়ালা মুয়াদ্দায়িন ওয়ালা মুসতাগনা আনহু রাব্বানা” অথবা, “আলহামদুলিল্লাহিল্লাজি আতআমানা ওয়াছাকানা ওয়াজাআলানা মিনাল মুসলিমিন”) না জানলেও অন্তত ‘আলহামদুল্লিাহ্’ বলা।

 

::: বিশেষ টিপস্ :::

আপনার যদি ব্যায়াম করার অভ্যেস থেকে থাকে, তবে খেয়াল রাখবেন একেবারে খালি পেটে অথবা একেবারে ভরা পেটে যেনো না হয়। ব্যায়াম করার পূর্বে ডিম, চিকেন স্যান্ডউইচ, হোল গ্রেইন রুটি বা পিনাক বাটার স্যান্ডউইচ ইত্যাদি জাতীয় খাবার খেয়ে নিন। খাবার খাওয়ার ২ঘন্টা পরে ব্যায়াম শুরু করুন।

 

আশা করছি উপরের নিয়ম মেনে ভাত খাবেন এবং সুন্দর ও সূস্থ্য থাকবেন।

 

আজ রাখছি, বরাবরের মতই ধন্যবাদ জানাচ্ছি, “সবার জন্য ব্লগ” –এর সাথে থাকার জন্য। নিজে জেনে অন্যকে জানাতে শেয়ার করুন।

প্রয়োজনীয় হেলথটিপ্স ও লাইফস্টাইল পড়ুন এখানে 

আশা করছি “চিন্তামুক্ত থাকতে খাওয়ার নিয়ম মেনে ভাত খান (Eat Rice According to the Rules of Eating to Stay Tension Free)”  লেখার মাধ্যমে কিছু তথ্য উপস্থাপন করতে পেরেছি।


ধন্যবাদান্তে;

    সহকারি প্রধান শিক্ষক, মাস্টার ট্রেইনার, লেখক ও ফ্রিল্যান্সার।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ