রোমান্টিক স্যাড উপন্যাস ‘সাগরের স্মৃতি’- ৭ম পর্ব । Romantic Sad Novel 'Sagorer Smriti'- Part 7


পাঠকগণ;
শুরুতেই বলে রাখা ভাল, গল্পের মূলভাব ও উপন্যাস-এর নামের সাথে সমন্বয় করতেই পুরুষ(মূল) চরিত্রে সাগর নাম ব্যবহার করা হয়েছে।

।সেজন্য গল্পের সাথে বাস্তবিক নামের মিল খোঁজা একান্তই অমূলক।


খাঁটি প্রেমের গল্পদিয়ে সাজানো রোমান্টিক স্যাড উপন্যাস সাগরের স্মৃতি । Romantic Sad Novel 'Sagorer Smriti। হাসি কান্না আর বাস্তবতার গল্প সাগরের স্মৃতি
সাগরের স্মৃতি উপন্যাস


রোমান্টিক স্যাড উপন্যাস সাগরের স্মৃতি Romantic Sad Novel 'Sagorer Smriti' -সম্পূর্ণ পড়ুন

ইসলামিক  শিক্ষামূলক গল্প উপন্যাস পড়ুন এখানে
*****

  কি যে হলো বুকটার ভিতরে, সারাক্ষণ শুধু বিজলির মতো চমকায়। পরিপূর্ণ ভালবাসা দিয়ে ভরে থাকছে। কি যেনো দরদের মতো উছলে উছলে পড়ে। একদম দেরি সয়না। মনে চায় এক্ষুণি সব বাঁধা ডিঙিয়ে, সব নিয়ম কানুন ভেঙে সবকিছু ভুলে দুজন বিয়ে করে ফেলি। মনটা এতটাই পাগল, সে ভুলেই যায়, বিয়ের পর কোথায় থাকবে? কি খাবে? মনে হয়, দুজন একসাথে থাকলে খাওয়া-দাওয়া লাগবে না। সন্ধ্যায় লাভলু আর সাগর বসে বসে গল্প করছিল আর বিভিন্ন ভাবনা ভাবছিল।

দোস্ত, তুই আমার জন্য একটা ব্যবস্থা করে দে না? সেদিন শুধু ছাদে একবার সামনাসামনি দেখা হয়েছে, তাও আবার ভয়ের মধ্যে। তুই-ই বল্, ভয় থাকলে কি কিছু বলা যায়? না কিছু করা যায়। তাই আমি একদম নিরিবিলি মনোয়ারা সাথে দেখা করতে চাই। দুজন মিলে মনের কথা খুলে বলবো। সরাসরি দুজন দুজনার নিঃশ্বাস অনুভব করব। একে অপরকে একটু স্পর্শ করে দেখবো। সাগরের এমন কথাতে লাভলু বলল, তুই এক কাজ করতে পারিস,,

কি কাজ?

কাজটা হচ্ছে, আমাদের বাড়ি আর পাশের বাড়ির মাঝখান দিয়ে ছোট একটা গলি আছে, যদিও ঝোড়-জঙ্গলে ভর্তি, তারপরও নিরাপদে দুজন দুজনের কাছে থেকে আলাপ করতে পারবি। ওই গলিতে ঢুকতে তোকে দুই বাড়ির ফাঁকা স্থানে দেওয়া লোহার খাঁচা টপকাতে হবে। খাঁচা টপকালেই প্রথমেই যে জানালাটা পড়বে, সেটাই মনোয়ারার রুম। তবে অবশ্যই সেটা হতে হবে রাত ১০টা-১১টার পরে। তখন ওদের বাসাসহ আশেপাশের সবাই ঘুমিয়ে পড়বে। তুই যদি পারিস আমার মনে হয় ভাল হবে। এছাড়া আর কোনো উপায় দেখছি না।

ঠিক আছে, বন্ধু, নো প্রবলেম।

তুই মনোয়ারার সাথে আলাপ করে দেখ্, ও কি বলে। ও যদি যেতে বলে আমি কষ্ট হলেও ওোর কাছে গিয়ে দেখা করবো। আর সাথে এই চিঠিটা দিস্। চিঠিতে তেমন কিছু লেখা নাই। আবেগের কিছু কথা আর পছন্দের নামটা বলে দিয়েছে। আজ থেকে তুমি আমার স্মৃতি হয়ে সাগরের বুকে থাকবে। এখন থেকে তোমাকে আমি স্মৃতি বলেই ডাকবো। তুমি সারাজীবনে “সাগরের স্মৃতি” হয়ে থাকবে। তবে কখনো দুঃখের স্মৃতি হইয়ো না। আমি সইতে পারবো না।

সাগরের চেয়ে মনোয়ারার ছটফটানিই বেশি। বন্দি জীবনে থেকে থেকে সাগরকে পেয়ে সে খুব উতলা হয়ে উঠছে। আর এক মূহুর্তেও বন্দী হয়ে থাকতে চায়না। সাগরকে নিয়ে ছোট্ট একটা ভালবাসার ঘর বাঁধতে চায় খুব তাড়াতাড়ি। সাগর চাকরি করবে, ওো যা এনে দেবে তাই রান্না করে ওোকে খাওয়াবো আর আমিও খাবো। সারাদিন সাগরের বুকের মধ্যে মাথা গুঁজে লুকিয়ে থাকবো। ওোকেও অনেক ভালবাসবো, এত আদর করবো যে, আমাকে ছাড়া কিছুই বুঝবে না। সারাদিন-ই প্রেমের পাগলামী বুকের ভেতরে। কোনো কাজে আর মন বসেনা। কারো কোনো কথা মনে থাকে না। উদাস উদাস লাগে খুবই। বারেবারে ছাদে যেতে মন চাই, তাই কারনে অকারনে ছাদে চলে আসে। যদিও সবসময় সাগরের দেখা মিলবে না তা জেনেও অজানা এক আশায় বারবার ছাদে এসে খুঁজতে থাকে সাগরকে। এসব ওোর বাসার আপা দুলাভাইয়ের চোখেও ধরা পড়েছে, তাই কাজের ছেলেটাকে বলে রেখেছে, তুই দেখবি মনোয়ারা কি কি করে। কাজের ছেলেটা ছোট হলেও খুব পাজী আর বদের হাড্ডি। এখন সারাক্ষণ মনোয়ারা আপুর পিছে লেগে থাকে। ছাদে আসলে এখন ঐই বদ ছেলেটাও সাথে আসে।

রোমান্টিক স্যাড উপন্যাস সাগরের স্মৃতি Romantic Sad Novel 'Sagorer Smriti' -সম্পূর্ণ পড়ুন

ইসলামিক  শিক্ষামূলক গল্প উপন্যাস পড়ুন এখানে

এদিকে লাভলু সুযোগ খুঁজছিল, কখন মনোয়ারার সাথে আলাপ করা যায়। এক ফাঁকে মনোয়ারাকে সাগরের সাথে দেখা করার কথা বললো। মনোয়ারা মনে মনে খুশি হয়ে বলল- আচ্ছা আসুক, ভালই হবে। আমি ছাদে গিয়ে সাগরকে বলে দিব আসতে। বিকেলে ছাদে গিয়ে সাগরকে ইশারায় বলল- রাত ১০টায় আমার বেডরুমের জানালায় এসো। খুব সাবধানে, আচ্ছা!! সাগরও ঘাড় নেড়ে সম্মতি জানালো।

বিকেল থেকে রাত ১০টা। সময় যেনো বড়ই বেরহম। যেতেই চাইছে না। দুপ্রান্তে দুজনেই অস্থির। মনোয়ারা সংসারের কাজ গুছিয়ে রেডি হচ্ছে। পরিকল্পনা করছে, আজ আগে আগে শুয়ে পড়ার, টিভি দেখা বা গল্প গুজব বাদ দিয়ে শরীর খারাপ উছিলা করে। নিজের রুমে গিয়ে নিজেকে ফ্রেশ করে ইচ্ছেমতো সেজেগুজে একদম নতুন বধু সেজে রেডি থাকবো, যেনো সাগর এসে দেখেই ফিদা হয়ে যায়। আমাকে কাছে পাবার জন্য পাগল হয়ে উঠে। সাগরকে এত ভাল লাগে যে, জীবনে শুধু ওোকে বিয়ে করে নিজের করে নিয়ে ওোর মাঝে নিজেকে বিলিয়ে দিয়ে ওোকে সুখী করতে পারলে মেয়ে হিসেবে স্বার্থক মনে হবে। এছাড়াও প্রথম দিন সাগর আসবে আমার কাছে, হোক না সেটা জানালার এপাশ ওপাশ। তবুও ওকে কিছু খাওয়াতে হবে। তাই গোপনে কিছু স্পেশাল রান্না করে লুকিয়ে রাখলো, সাগর আসলে নিজের হাতে ওোর মুখে তুলে খাওয়ায়ে দিব। আরো কত কি? প্রেমে পাগলদের ভাবনার কী শেষ আছে? পৃথিবীতে একমাত্র প্রেম ভালবাসা, মায়া মমতা আর আদর স্নেহ-ই পারে স্বার্থপরতা থেকে মানুষকে দূরে রাখতে। অন্যদিকে সাগরের বুকেও একই উথালী পাথালী। তাড়াতাড়ি সন্ধ্যার টিউশনি শেষ করে এসে নিজেকে সুন্দর করে গুছিয়ে স্মৃতির কাছে যাবো। যেনো কোনদিক থেকেই আমাকে অপছন্দ না করে। কেমন জানি বুকটার মধ্যে ধুকধুক করছে সাগরের। এতবড় প্রাচীর, কিভাবে টপকে যাবো, কেউ দেখে ফেলে যদি, যদি একেবারেই সম্ভব না হয় প্রাচীর টপকানো, তো দুজনের এতসব ভালবাসার প্ল্যান পন্ড হয়ে যাবে। আরো নানান চিন্তা। তারপরও প্রেম মানেনা, কোনো বাঁধেনা। যেভাবেই হোক যাবোই ওোর কাছে। এসব ভাবতে ভাবতে প্রায় ১০টা বেজে আসল। সাগরের অস্থিরতা বেড়ে গেল। ওদিকে স্মৃতি তার সাগরের জন্য নিজেকে রেডি করে জানালা খুলে খাটে বসে অপেক্ষা করছে আর ঘড়ির কাঁটার অবস্থান দেখছে।

সন্ধ্যার দিকেই ফজলু এসেছিল, কিন্তু হঠাৎ কোনো সিদ্ধান্তে যদি না যাওয়া হয় সেকারণে আগে থেকেই সাগর ফজলুকে কিছু বলেনি। এখন যাওয়ার পূর্ব মূহুর্তে ফজলুকে সব বলল এবং সাথে ঐই খাঁচা পার হতেও সাহায্য করার কথা বললো। ফজলু বেশ খুশি মনে রাজি হলো। কারন সাগর ফজলুদের খুব কেয়ার করে, টাকা-পয়সাসহ সমস্ত বিপদে আপদে নিজের পরিবারের মানুষ হিসেবেই দেখে তাদেরকে। সেজন্য ফজলু চায় সাগরের জীবনটা হাসি-খুশি থাকুক। এত দুঃখ জ্বালা নিয়ে মানুষ বেশিদিন বাঁচতে পারেনা।  তাছাড়া অন্য কোনো স্বার্থ ফজলু খোঁজে না।

নির্জন রাত, কেউ যদি দেখে চোর বলে মা’রপিট শুরু করে দেয় তবে কোনো জবাব-ই দিতে পারব না। ফজলু বলল, আল্লাহ্ ভরসা, কিচ্ছু হবে না। আপনি পার হন। যাই হোক যতটা কঠিন মনে হয়েছিল মোটেও তা না। খুব সহজেই সাগর খাঁচা পার হয়ে গলির মধ্যে ঢুকে পড়ল। ফিসফিস করে ফজলুকে বিদায় দিয়ে খুব আস্তে আস্তে স্মৃতির জানালার কাছে এগিয়ে গেল যেনো পাশের বাসা বা এই বাসার কেউ টের না পায়।

রাত ১০টা পার হয়ে গেছে। সাগর আর তার স্মৃতি একদম মুখোমুখি দুজন। মাঝখানে শুধু ঐই বেরসিক জানালাটা। আর কেউ নেই, চারিদিকে নিস্তব্ধ নিরবতা। দুজন দুজন-কে কাছে পেলে কত কি বলবে, কত কি করবে। তার কিছুই কেউ বলতে পারছে না বা করতে পারছে না। বেমালুম সব ভুলে গেছে। শুধু দুজন দুজনার নয়নে চেয়ে আছে। সাজগোজ করাতে স্মৃতিকে রাতের অপসরার মতো লাগছে, আর সাগরতো অপূর্ব।

বেশ কিছু সময় চুপচাপ থাকার পর সাগর বলে উঠল (ফিসফিসিয়ে), এই স্মৃতি, তুমি কেমন আছো? স্মৃতি শিহরিত হয়ে, সাগরের হাতের আঙ্গুলের মধ্যে সব আঙ্গুল গুঁজে দিয়ে আস্তে আস্তে বলল, হ্যাঁ, ভালো আছি-তো।

রোমান্টিক স্যাড উপন্যাস সাগরের স্মৃতি Romantic Sad Novel 'Sagorer Smriti' -সম্পূর্ণ পড়ুন

ইসলামিক  শিক্ষামূলক গল্প উপন্যাস পড়ুন এখানে

আচ্ছা সাগর, তুমি আমাকে এত সুন্দর নাম দিয়েছো কেন? আমি কি এত সুন্দর নামের যোগ্য, কম শিক্ষিত গরিব ঘরের মেয়ে। একথা শুনে সাগর স্মৃতির মুখে হাত দিয়ে বলল, চুপ! পঁচা কোথাকার! তুমি এর চেয়েও সুন্দর নামের যোগ্য। তুমি সাগরের বুকে সুখের স্মৃতি। আজ থেকে আর তোমাকে মনোয়ারা নামে ডাকবো না। আজ থেকে তুমি “সাগরের স্মৃতি”।

মায়াবী নিঝুম রাতে দুজন ছেলে-মেয়ে একসঙ্গে থাকলে শয়তান তার সুযোগ নিবে এটাই স্বাভাবিক। এই, তোমাকে কেমন জানি নেশাখেরের মতো লাগছে, তোমার চোখে কিসের যেনো নেশা মনে হচ্ছে। সাগরের এমন কথা শুনে স্মৃতি বলল, ন্যাকা বাবু, কিচ্ছু বোঝোনা, না? আজ তোমাকে আমি নেশায় পাগল করে দেবো আর আমার নেশা কাটিয়ে নিব। সেদিন তোমাকে ছাদে পেয়ে কিচ্ছু করতে পারিনি। আজ ছাড়ছি না। স্মৃতির কথা শুনে সাগরেরও নেশা হয়ে আসলো। স্মৃতির দীঘল কালো চুলের গোঁছা খুলে দিয়ে, চুলগুলো নাকের কাছে এনে গন্ধ শুকছে, কি যে ভালবাসার আবেগ মাখা তা বলে বোঝানোর মতো না। এবার স্মৃতি আরো পাগল হয়ে উঠল। দুহাতে সাগরকে জড়িয়ে ধরতে চাইছে। তবে, সাগর বলল- না স্মৃতি, প্লিজ, আমরা বিয়ের আগে খারাপ হতে চাইনা। আমি তোমার আর তুমিতো আমারই, তাইনা? তো ভালবাসার এই নেশা না হয় আমরা বুকে পুষে রাখি। বিয়ের পর যখন বৈধ সম্পর্ক হবে, তখন ইচ্ছেমতো না হয় যা খুশি তাই ক’রো। সাগরের এমন বাগড়া দেওয়া আনরোমান্টিক কথা শুনে স্মৃতি প্রথমে কিছুটা মন খারাপ করলেও পরক্ষণেই সাগরকে বলল, থ্যাঙ্ক ইউ সাগর। সত্যিই তুমি সুপুরুষ। হ্যাঁ, স্মৃতি, ভালবাসা মানে শুধু দেহের ক্ষুধা মেটানো না। দুজন দুজনকে বোঝা, দুজনার পথের সাথী হওয়া। আর এসব নেশাতো কয়েক মূহুর্তের তৃপ্তি মেটানো মাত্র। আর এসব নোংরাভাবে মেটালে আল্লাহ নারাজ হন। সাগরের কথাগুলো শুনে স্মৃতি আরো খুশি হয়ে গেল। কারন, তারা দুজনেই সাধ্যমতো চেষ্টা করে নামাজ পড়তে, ইসলামের পথে চলতে। তাই শয়তানের প্ররোচণায় যা করে ফেলে তার জন্য আবার আল্লাহর কাছে ক্ষমাও চেয়ে নেয়। আর মানুষ-তো রক্তে মাংসে গড়া, এই ধরনের আকাঙ্ক্ষা আসাটাই স্বাভাবিক। এতক্ষণ সাগর আর স্মৃতি দুজনে মিলে দায়িত্বশীল কথাবার্তা বলছিলো। দুজন একটা সংসার সাজাবে, সারাদিন দুষ্টুমি আর ভালবাসায় ভরে রাখবে ছোট্ট সংসারটা-কে।

সাগর স্মৃতির ওড়না দিয়ে যত্ন করে স্মৃতির মুখটা মুছে দিল আর বললো, ঠিক আছে জানপাখি, এখন যাই। তুমি ঘুমাও। সকালেতো দুজনের-ই কাজ আছে। স্মৃতিও ওড়না দিয়ে সাগরের মুখ গলা মুছিয়ে দিয়ে, রেঁধে রাখা খাবারগুলো সাগরকে খাওয়ায়ে দিচ্ছিল আর বলছিল, আর একটু থাকোনা। তোমাকে ছাড়তে মন চাচ্ছে না। সাগর একটু খাবার নিয়ে স্মৃতিকেও খাওয়ায়ে দিল আর বললো, দেখছো রাত প্রায় ৩টা। এবার ছাড়ো, আমি যাই।

    সকালেবেলা স্মৃতি ছাদে আসলো। দুজনার চোখে চোখ পড়তেই স্মৃতি লজ্জায় চোখ নামিয়ে মিটিমিটি হাসছে। কারন, জীবনের প্রথম কোনো ছেলের সঙ্গে নির্জন রাতে সময় কাটিয়েছে, আবেগের নেশায় কত কি বলে ফেলেছে। এইসব ভেবে এমন লজ্জা। তারপর আস্তে আস্তে মুখ তলল। সাগর ভ্রূ’র ইশারায় বললো, কী ব্যাপার লজ্জা পাচ্ছো কেন? স্মৃতি জিহ্বা ভেঙিয়ে হাতে কিল দেখিয়ে বললো, দিব একটা। দুষ্টু কোথাকার।

এভাবে দুজন দুজনার কাছে আপন আর বিশ্বস্ত হয়ে উঠল। সাগরের চেয়ে স্মৃতিই বেশি দূর্বল হয়ে পড়েছে। সে চায় প্রায় প্রতিদিনই দেখা হোক দুজনার। কাছাকছি থাকি। কিন্তু সাগরতো জীবনের ঘানি টানতে টানতে বাস্তবতা বোঝে। তাই সম্মানের ভয়ে দূরে থেকেই ভালবাসার আবেগ মেটাতে চায়। সামনে রোজা। পুরো একমাস অন্যরকম যাবে। ইচ্ছে হলেও দেখা করা যাবে না। তাই লাভলুর মাধ্যমে দুজনে সিদ্ধান্ত নিল রোজার শুরুর আগের দিন আবার আমরা রাতে দেখা করবো। ঠিক সেভাবেই সাগর সেদিনও খাঁচা ডিঙিয়ে স্মৃতির কাছে গেল। অনেক কথা হচ্ছিল দুজনের মাঝে। হঠাৎ স্মৃতি বলে উঠল, আমার খুব ভয় হয়।

কেন? কিসের ভয়?

এই যে, তোমাকে পাবো কি না?

তোমার পরিবারে যারা আছেন, তারাতো আমাকে মেনে নেবেনা। ইত্যাদি ইত্যাদি।

স্মৃতির এমন হতাশার কথা শুনে সাগর বললো, শোনো পাগলী, আমার যেহেতু বাবা মা নেই, তাই আমার অভিভাবক সর্বপ্রথম আমিই, তারপরে ভাইবোনদের বলবো, তারা মানলে ভাল, না মানলে তুমি আমি সিদ্ধান্ত নিয়ে নিব।

কি? আসবা তো? আমি যখন ডাকবো। সাগরের কথা শুনে স্মৃতি সাগরের মাথার চুল বিলিয়ে দিতে দিতে বললো, জ্বী, মহারাজা, তোমার ডাকে এই স্মৃতি যখন তখন হাজির হবে। তোমাকে নিজের করে পেয়ে যদি তোমার সেবা করতে পারি তাহলে, এর চেয়ে পরম পাওয়া আর কিছু হবে না। সব কথার মাঝে দুজনে এ কথাও সেরে নিল যে, ঘনঘন জানালায় দেখা করা যাবে না। কেউ দেখে ফেললে সর্বনাশ হয়ে যাবে। আর সিদ্ধান্ত হলো যত দ্রুত সম্ভব সাগর একটা চাকরি খুঁজে নিয়ে তারপর দুজনে বিয়ে করবে।

এভাবে এগিয়ে চলতে লাগলো সাগর স্মৃতির ভালবাসা। প্রতিদিন ছাদে দেখা হয় কয়েকবার। আর সাগর টিউশনির পাশাপাশি এখন চাকুরি খোঁজায়ও ব্যস্ত। কয়েকদিন পর সাগর ভাবলো এই প্রথম ঈদ আসছে, আমাদের সম্পর্কের পর। তাই স্মৃতিকে কি কি উপহার দেওয়া যায় এ নিয়ে রুমের আকতার এর সাথে আলোচনা করে নিল। এবং দুজনে কয়েকদিনের মধ্যে শপিংমলে গিয়ে কিনে আনলো। এভাবে রোজার শেষের দিকে লাভলুর মাধ্যমে চাঁদ রাতে দেখা করবে বলে সাগর খবর পৌঁছে দিল। স্মৃতিতো খুশি।

রোমান্টিক স্যাড উপন্যাস সাগরের স্মৃতি Romantic Sad Novel 'Sagorer Smriti' -সম্পূর্ণ পড়ুন

ইসলামিক  শিক্ষামূলক গল্প উপন্যাস পড়ুন এখানে

দিন গুণতে গুণতে চাঁদ রাত এসে গেল। সাগর স্মৃতির কাছে গেল প্রায় ১২টার দিকে। কারণ ঐই রাতে সবার ঘুমাতে দেরি হয় এবং আশেপাশের সবাই সজাগ থাকে। তাই স্মৃতির জন্য কেনা উপহারগুলো নিয়ে সাগর দেখা করতে গেল। এতকিছু উপহার পেয়ে-তো স্মৃতি মহাখুশি। একে একে খুলে খুলে সব দেখলো আর সাগরকে বললো যা যা কিনেছো, সব নিজের হাতে পরিয়ে দাও। সাগর তাই করল। স্মৃতির বায়না আজ আর তাড়াতাড়ি যেতে চাইবা না। সারারাত থাকবা। কারণ কালতো ঈদ, কোনো কাজ নাই। তাই আজ আমাকে বেশি সময় দিতে হবে। সাগর প্রথমে অমত করলেও ওোর আবদারের কাছে না করতে পারেনি। এভাবে গল্পে গল্পে প্রায় ভোর হয়ে এলো। এবার সাগর যাওয়ার জন্য স্মৃতিকে বলল, ঠিক আছে, ভোর হয়ে যাচ্ছে, আর থাকাও ঠিক হবে না। স্মৃতিও সম্মতি দিল। সাগর বের হয়ে আসার জন্য খাঁচা পার হচ্ছিল। হঠাৎ-ই পাশের বাসার মহিলাটা বলে উঠল- কে কে? এই ছেলে দাঁড়াও........।     

চলবে.... রোমান্স ও বাস্তবতার গল্প শুনতে ৮ম পর্বে চোখ রাখুন।

অন্যান্য সকল পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ