![]() |
সাগরের স্মৃতি উপন্যাস |
রোমান্টিক স্যাড উপন্যাস সাগরের স্মৃতি । Romantic Sad Novel 'Sagorer Smriti' -সম্পূর্ণ পড়ুন
ইসলামিক ও শিক্ষামূলক গল্প উপন্যাস পড়ুন এখানে পৃথিবীটা
যেনো অন্ধকার লাগছে সাগরের কাছে। আর কত পরীক্ষায় ফেলবা বিধি। আমি এত ছোট মানুষ, এত
বড় বড় কঠিন পরীক্ষায় কি পাশ করতে পারবো? সে যোগ্যতা কি আছে আমার? বিছানায় আধাশোয়া
হয়ে এসব ভাবনায় ভাবছিল সাগর। কয়েকদিনেই জীবনটা তার রূপ বদলে ফেলল। নিজের পরিবার, সমাজ-সংসার,
নিজের স্ট্যাটাস, মেয়েটার বৈশিষ্ট্য এসব চিন্তা এই মূহুর্তে আসাটাই স্বাভাবিক।
যাক, যতই খারাপ লাগুক, মেয়েটাকে আমি বুঝতে দিব
না। আগে যেমন ব্যবহার করছিলাম ঠিক তেমনি করে যাবো। সে যেনো বুঝতে না পারে, আমার মধ্যে
আলাদা কোনো ভাবনা কাজ করছে। পরদিন সকালে বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়াতেই মেয়েটাকে ছাদে দেখল
সাগর। আজ আসতে ছাদের দরজা শব্দ করে খোলে নাই, প্রতিদিনের মতো হাসিও নাই মুখে।
সাগরের মুখপানে তাকিয়ে শুধু বড় বড় শ্বাস ফেলছে। মেয়েটা নিশ্চিত ভেবে নিয়েছে, তার জীবন কাহিনী
জানার পর সাগর আর তাকে ভালবাসার পথে হাঁটবে না।
সাগর
একটা মিষ্টি হাসি দিয়ে বলল, কি ব্যাপার? মন খারাপ কেন? এরকম করছো কেন? এই প্রথম মেয়েটাকে
তুমি বলে সম্বোধন করলো। করার কারন হচ্ছে, মেয়েটা যেনো বুঝতে পারে সাগর আরো আপন হয়ে
গেছে। হাত ইশারায় কাছে আসতে বলল, জানালার যতটা কাছে আসা যায় ততটা। মেয়েটা ভীতু মনে
লজ্জা রাঙা মুখে আস্তে আস্তে ছাদের এই প্রান্তে আসলো, যে প্রান্তে সাগরদের বাসার জানালা।
সাগর এবার নিচু স্বরে বলল, তুমি কি ভেবেছো? তোমার চিঠি পড়ার পরে তোমাকে ভুলে যাবো?
দূর বোকা, ভালবাসা কি জাত-কুল, বংশ মেনে বা জেনে হয়? আমি তোমার মতো মেয়েকেই জীবনে আশা
করি। কথাগুলো মনোযোগ দিয়ে শুনে চলে যাচ্ছিল মেয়েটি, যাবার সময় ছাদের দরজার কাছে দাঁড়িয়ে
হাত ইশারায় বোঝালো, আমাকে ভালবাসলে তুমি সুখ পাবেনা, শুধু কষ্টই পাবে। আজ আর প্রতিদিনের মতো মেয়েটা বারবার ছাদে আসে
নাই। ছাদের দরজা খোলার শব্দও তাই বারবার হয়নি। সারাদিনে ২/৩ বার এসেছে, বেশ চুপিসারে।
কিন্তু সাগর প্রায় সারাদিনই জানালার পাশে অপেক্ষা করছিল প্রতিদিনের মতই।
যোহরের
আজান পড়ছিল, সাগর ওযু সেরে মসজিদের দিকে যেতে যেতে ভাবছিল, কি করে মেয়েটার মনটা ভাল
করা যায়। মসজিদে গিয়ে দেখা হলো লাভলুর সাথে। কুশল বিনিময়ের সময় পাশে দাঁড়িয়ে থাকা লোকটিকে
দেখিয়ে লাভলু বলল, এটাই আমার দুলাভাই, উনার কথায় আপনাকে বলেছিলাম। হাত বাড়িয়ে দিয়ে
লোকটা বলল, আমি জালাল। তোমার কথা লাভলুর মুখ থেকে শুনেছি। তোমার প্রশংসা করে। সবাই
একসঙ্গে নামাজ আদায় শেষে বাইরে দাঁড়ালো। লাভলুর ইশারাতে জালাল সাহেব বলল, আচ্ছা সাগর
তোমাকে একটা কথা জিজ্ঞেস করতে চাই, তোমার যদি আপত্তি না থাকে।
রোমান্টিক স্যাড উপন্যাস সাগরের স্মৃতি । Romantic Sad Novel 'Sagorer Smriti' -সম্পূর্ণ পড়ুন
ইসলামিক ও শিক্ষামূলক গল্প উপন্যাস পড়ুন এখানেজ্বী,
বলেন—
লাভলু
আর মেয়েটা তোমার ব্যাপারে সব আলোচনা করেছে আমার সাথে। সবসময়ই ওোরা যেকোনো ব্যাপারে
আমার সাথে শেয়ার করে। তো, তুমি সত্যি করে বলবা কি? সত্যিই মেয়েটাকে ভালবাসো কিনা? মেয়েটা
খুব দুঃখী। যদি সত্যিই মন দিয়ে থাকো তো ভিন্ন কথা, আর যদি মজা করার জন্য হয়ে থাকে তবে
দয়া করে এমনটা করোনা, কারন মেয়েটাকে কষ্ট দিলে আমি খুব কষ্ট পাবো।
সাগর
জবাবে বলল- দেখেন দুলাভাই, আমি ওকে জীবন সাথী বানানোর জন্য ভালবাসতে চাই এবং সারাজীবন
একসাথে চলতেও চাই। সাগরের কথা শুনে লাভলু ও দুলাভাই বেশ খুশি হলো।
এবার
লাভলুকে উদ্দেশ্য করে সাগর বলল, আমি মেয়েটার সাথে সরাসরি দেখা করে কথা বলতে চাই। লাভলু
বলল, মেয়েটা যাদের কাছে থাকে ওোরা সম্পর্কে মেয়েটার আপা-দুলাভাই হয়। ঐই আপা নামের মহিলাটা
ভীষণ কড়া। কোথাও গেলে বাইরে থেকে দরজায় তালা দিয়ে বের হয়। তবুও আমি মেয়েটার সাথে আলাপ
করে সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো সরাসরি দেখা করানোর। ওদের সাথে কথা শেষ করে এতক্ষণে সাগর
বাসার দিকে রওয়ানা হল।
পরদিন মেয়েটাকে খুব হাসিখুশি দেখাচ্ছিল। সাগরের বুঝতে বাকি রইলো না যে, লাভলু আর দুলাভাই-এর সাথে কথা বলার পর ওোদের সাথে আলাপ হয়েছে মেয়েটার। মেয়েটা আজ বেশ সেজেগুজে এসেছে ছাদে। খুব দারুণ লাগছে, ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক আর কপালে টিপ দেওয়া। দুধে আলতা গায়ের রঙে সাগর মুগ্ধ। মেয়েটা সাগরের দিকে মায়াবী নজরে তাকিয়ে তাকিয়ে সাগরের নেশা ধরিয়ে দিতে লাগলো। খুবই দুষ্টুমী করছে সাগরকে খুশি করতে। সাগরও আর থাকতে না পেরে জানালা দিয়ে দু’হাত বাড়িয়ে ডাকলো, বললো, আসো আমার বুকের মধ্যে চলে আসো, শক্ত করে জড়িয়ে ধরো। মেয়েটা আজ একটুও লজ্জা বা শংকিত হচ্ছে না। সাগরের কথা শুনে এক দৌড়ে জানালার কাছে এসে আস্তে আস্তে বলল- সত্যি আসবো? আসলে কি করবে শুনি? সাগর বলল, কাছে আসলে তোমাকে বুকের মধ্যে ধরে তোমার লাল গোলাপী ঠোঁটে কামড় দিব। মেয়েটা বলল, ঠিক আছে, তোমার যা খুশি তাই করো। দুষ্টুমীর ফাঁকে হঠাৎ-ই সাগরের মনে হলো, এতদিন হয়ে গেল কিন্তু মেয়েটার নাম আজও জানা হয়নি। তাই জিজ্ঞেস করলো, এই তোমার নাম কি? মেয়েটো ঘাড় নেড়ে বলল, বলবো না--- সাগর বলল, না বললে কথা নাই। তখন একটু জোরে বলল, ম-নো-য়া-রা। এই বলেই দৌড়ে ছাদের দরজার কাছে চলে গেল, আর বলল, পঁচা নাম তাইনা? না, না, খুব সুন্দর নাম। পছন্দ না হলেও কি কারো মুখের সামনে বলা যায় খারাপ? নামটা বড় আর কমন, কেমন জানি বয়স্ক মানুষের নামের মতো। তাই সাগর মনে মনে ঠিক করলো ওোর একটা নিজের পছন্দ মতো নাম দিয়ে দিবে।
*****
মাত্র
কয়েকদিনের পরিচয়ে লাভলূ আর সাগরের মধ্যে বেশ ঘনিষ্ঠতা তৈরি হয়ে গেছে। এর আসল কারন হচ্ছে
লাভলু যাকে মন দিয়েছে সেই আমেনা থাকে সাগরের বাসার ২য় তলায়, আর সাগরের মানুষটি থাকে
লাভলুদের বাসায়। এখানেই ওরা দুজন দুজনকে সাহায্য করতে পারে এবং খুব সহজেই উভয়ই খোঁজ
খবর পেয়ে থাকে। সব মিলিয়ে সাগর আর লাভলু এখন খুব কাছের বন্ধু হয়ে উঠেছে। প্রায় প্রতিদিন
কাজ সেরে দুজন সন্ধ্যার পরে একত্রে বসে আড্ডা দেয়। তখন দুজন মিলে তাদের ভালবাসার মানুষটির
কথা আলোচনা করে। আজও তেমনি দুজন এসেছে আড্ডা দিতে। লাভলু বলল, সাগর বাদাম খাওয়া, তোর
ভাল খবর আছে। কি খবর? বলনা,
বাদাম
কিনে দুজন এক জায়গায় বসলো। লাভলূ পকেট থেকে একটা চিঠি বের করে বললো, এই নে, মনোয়ারা
তোকে দিছে। সাগর পেয়েতো মহা খুশি। তারপর চিঠিটা খুলে দুজনে মিলে পড়ল।
বেশ
রোমান্টিক প্রেমের চিঠি লিখেছে। চিঠির মূল কথা ছিল, সাগর তুমি আগামীকাল দুপুর ২টায়
আমাদের বাসার ছাদে আসবা, আমি তোমার সাথে কথা বলতে চাই। লাভলু আর জালাল দুলাভাইকে বলে
রেখেছি, তারা তোমাকে হেল্প করবে। সবশেষে খুব ভালো থেকো।
ইতি
তোমার স্মৃতি
রোমান্টিক স্যাড উপন্যাস সাগরের স্মৃতি । Romantic Sad Novel 'Sagorer Smriti' -সম্পূর্ণ পড়ুন
ইসলামিক ও শিক্ষামূলক গল্প উপন্যাস পড়ুন এখানেএই স্মৃতি
শব্দটা পড়তেই সাগরের মাথায় আসল, আমি না একটা নাম খুঁজছিলাম। এইতো পাওয়া গেছে, স্মৃতি
নামটা খুব সুন্দর মানাবে ওোর সাথে। তাহলে এইটাই ফাইনাল তোর নাম রেখে দিব স্মৃতি। দুজনে
আড্ডা শেষে বাসায় এসে খাওয়া-দাওয়া সেরে সাগর বিছানায় মাথা রেখে মনে মনে কত কিছু ভাবছে।
এতদিন পর এই প্রথম দুজন দুজনার সামনে যাব। প্রথম দেখা হবে, কি নিয়ে যাবো, কি বলবো,
কি করব ইত্যাদি ইত্যাদি ভেবে সাগর অধৈর্য্য হয়ে উঠল। সময় আর কাটছে না। কখন সকাল হবে,
দুপুর ২টা বাজবে।
রাতটা
পার হলো। সকালে ব্রাশ মুখে নিয়ে সাগর জানালার পাশেই দাঁড়িয়ে ছিল। এর মধ্যে মনোয়ারা
ছাদে এসে খুব আনন্দ করছে। সাগরকে ইশারায় বলছে, মনে আছে তো? ঠিক দুপুর ২টায়! দেরি করবা
না... আচ্ছা! সাগর ঘাড় নেড়ে জানালো, ঠিক আছে। রুমের সবাই এখন সাগর আর মনোয়ারার ভালবাসার
কথা জানে। সবাই মনোয়ারাকে ভাল চোখে দেখে। ফজলু ঘুম থেকে উঠলে সাগর ফজলুকে কথাটা জানাতেই
ফজলুতো খুব খুশি হয়ে গেল। বলল, তাই নাকি? তাহলে আজ আর অফিসে যাবো না, আপনার সঙ্গে আমিও
যাবো এগিয়ে দিতে। ফজলুর কথা শুনে সাগর আরো খুশি হয়ে গেল।
তারপর ফজলু আর সাগর ভালো পোশাক পরে নিচে নেমে কসমেটিক্স এর দোকনে গিয়ে বেশ কিছু উপহার কিনে
চলে গেল ওদের বাসার কাছে। যেয়ে দেখল, লাভলু আর জালাল ভাই অপেক্ষায় আছে। ফজলুকে তাদের
সাথে পরিচয় করিয়ে দিল। জালাল ভাই বলল, সাগর যাও, মনোয়ারা তোমার জন্য ছাদে অপেক্ষা করছে।
মনে রেখো সময় খুব অল্প। কোনরকম ইশারা দেবার সাথে সাথেই চলে আসবা। সাগর হ্যাঁ বলে ভীতু
পায়ে ছাদে উঠতেই দেখলো, মনোয়ারা ইচ্ছেমতো সেজেগুজে তার অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছে। সাগর
আর মনোয়ারা মুখোমুখি। এই প্রথম দুজন দুজনার একদম কাছে। কারো মুখে টু শব্দ পর্যন্ত নেই।
শুধু দুজন দুজনার চোখে পলকহীন তাকিয়ে আছে। দুজনেরই মনে মনে খুব ইচ্ছে করছে, জড়িয়ে ধরার।
কিন্তু সাহস কারোরই হচ্ছিল না। দুজনই ভাবছিল, ওো আগে ধরুক। আসলে কেউই সাহস করে কাউকে
বুকে নিতে পারল না। দুজনেরই ভালবাসার আবেগে বুকটা কাঁপছিল।
নিমিষেই দুজন দুজনার দৃষ্টিতে হারিয়ে গেল। ভুলেই গেল সময় খুব অল্প, কেউ ছাদে উঠলেই সর্বনাশ। এতক্ষণে মনোয়ারা সাগরের
ডান হাত ধরে চোখে চোখ রেখে বলে উঠল, আচ্ছা সাগর, তুমি কি আমায় সত্যি ভালবাসো? এই কথাটা
শেষ না হতেই নিচ থেকে আওয়াজ আসলো, সাগর মানুষ আসছে, জলদি নিচে নেমে আয়। এক মূহুর্তে
তড়িঘড়ি করে সাগর পকেট থেকে উপহারগুলো মনোয়ারার হাতে গুঁজে দিয়ে দ্রুত পায়ে নেমে পড়ল।
দুজনার
দেখা হবার পর হৃদয়ের আবেগ আর ছটফটানি বেড়ে গেল। দুজনই এখন চাই কাছে থেকে সময় কাটাতে,
দুষ্টুমী করতে আর ভালবাসার আবেগ ছড়াতে।
দূর
ছাই!!!
বন্দি
মানুষের সাথে প্রেম করা জ্বালা। লাভলু আর আমেনা কত সুন্দর ইচ্ছে হলেই দেখা করতে পারে,
আড্ডা দিতে পারে। ইশ্ আমরা যদি ওদের মতো হতে পারতাম। কত কি ভাবনা সাগরের।
বয়সের
এটাই দোষ। পৃথিবীর সব ছেড়ে শুধু মনে চাই ভালবাসার মানুষটিকে নিয়ে ইচ্ছে সাগরে হাবুডুবু
খাই।
রোমান্টিক স্যাড উপন্যাস সাগরের স্মৃতি । Romantic Sad Novel 'Sagorer Smriti' -সম্পূর্ণ পড়ুন
ইসলামিক ও শিক্ষামূলক গল্প উপন্যাস পড়ুন এখানেচলবে.... রোমান্স ও বাস্তবতার
গল্প শুনতে ৭ম পর্বে চোখ রাখুন।
0 মন্তব্যসমূহ
Always stay connected with SOBAR JONNO BLOG
সবসময় যুক্ত থাকুন সবার জন্য ব্লগের সাথে।