সৃজনশীল খাতা দেখার নিয়ম । creative question marks

মনে রাখেবেন, আপনি শিক্ষক হিসেবে কখনই অস্বাভাবিক অবস্থায় খাতা মূল্যায়ণ করতে বসবেন না।  আপনার একটি ভুল সিদ্ধান্তে লন্ডভন্ড হয়ে যেতে পারে কোনো শিক্ষার্থীর জীবন

সৃজনশীল খাতা মূল্যায়ণ

সম্মানিত পাঠক, ইতিমধ্যে আপনারা ‘সৃজনশীল প্রশ্ন পদ্ধতি কি ও তার বিস্তারিত’ পড়ে সৃজনশীল সম্বন্ধে বিস্তারিত ধারনা পেয়েছেন। বাঁকি আলোচনা তুলে ধরা হল।

সৃজনশীল খাতা দেখার নিয়ম । creative question marks

এ পর্বে সৃজনশীল প্রশ্ন পদ্ধতিতে একজন শিক্ষক কিভাবে খাতা মূল্যায়ণ ও নম্বর প্রদান করবেন এবং শিক্ষার্থীরা কীভাবে উত্তর দেবে তা নিয়ে বিস্তারিত-

শিক্ষামূলক আর্টিকেল পড়ুন এখানে

সৃজনশীল খাতা দেখার নিয়ম।creative question marks: প্রথমত, শিক্ষক-এর প্রশ্ন প্রণয়ন সম্পর্কে আলোচনা কার যাক ঃ-

একজন শিক্ষক যখন প্রশ্ন প্রণয়ন করবেন, অবশ্যই নিচে উল্লেখিত বিষয়গুলির দিকে মনযোগী হতে হবে :

·       শিক্ষার্থীদের শ্রেণি, বয়স বিবেচনা করতে হবে। কারন আপনি শিক্ষক হিসেবে অনেককিছু জানলেও যে শ্রেণির জন্য প্রশ্ন করছেন, সে শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জ্ঞানক্ষমতা মাথায় রাখবেন। এবং সে মতে প্রশ্নের গভীরতা প্রয়োগ করবেন।

·       অবশ্যই প্রশ্ন সহজ হতে হবে। প্রশ্নের ভাষাও সরল হতে হবে। একজন শিক্ষার্থী যেন পরীক্ষার কক্ষে আপনার প্রশ্নের ধরন বা ভাষার কারনে দ্বিধা-দ্বন্দ্বে পড়ে তাঁর নিজস্বতা হারিয়ে না ফেলে। একজন আদর্শ প্রশ্নকর্তা অবশ্যই ‍শিক্ষার্থীর পজেটিভ দিক চিন্তা করে প্রশ্ন করে থাকেন।

·       প্রশ্ন করার সময়, সময়ের কথা মাথায় রাখতে হবে। শিক্ষার্থী যেনো আপনার প্রশ্ন পাবার পর সে প্রশ্ন পড়ে-বুঝে স্থিরভাবে নিজের স্বাভাবিক গতি দিয়ে সব লিখে আসতে পারে। কোনভাবেই শিক্ষার্থীকে প্রেসারে ফেলা বা সময়ের ব্যাপারে গাফেল হওয়া কাম্য নয়।

·       সৃজনশীল প্রশ্ন-এর উদ্দীপক অবশ্যই আদর্শ হওয়া বাঞ্চনীয়। এত বেশি বড় করা যাবে না, যেনো শিক্ষার্থী উদ্দীপক পড়তেই তার উত্তর লেখার সময় নষ্ট হয়ে যায়। আবার এত ছোট করাও যাবে না, যেখানে শিক্ষার্থী উদ্দীপক পড়ে মূল বিষয়বস্তু বুঝতেই পারবে না। তাহলে সফল হবেনা, সৃজনশীল খাতা দেখার নিয়ম।creative question marks -এর লক্ষ্য।

শিক্ষামূলক আর্টিকেল পড়ুন এখানে

·       প্রশ্ন প্রণয়নের সময় অবশ্যই প্রশ্নের ‘উত্তর ক্লু’ সংগ্রহ করে রাখতে হবে। যেনো খাতা মূল্যায়ণের সময় সঠিকভাবে মূল্যায়ণ করতে পারেন অথবা আপনার অনুপস্থিতিতে বা সাময়িক অসুবিধার কারনে অন্য শিক্ষক সহজেই খাতা মূল্যায়ন করতে পারেন। একজন আদর্শ প্রশ্নকর্তার অন্যতম গুন এটি। এর আরেকটি সুবিধা হচ্ছে খাতা মূল্যায়ণের সময় উত্তর তৈরি করার ঝামেলা থাকবে না।

·       আদর্শ প্রশ্নের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল, প্রতিটি প্রশ্নের জন্য বরাদ্দকৃত নম্বর প্রশ্নপত্রে উল্লেখ করা। তাহলে শিক্ষার্থী সময় ও নম্বর দেখে প্রয়োজনানুসারে উত্তর দিতে পারবে।

নিচে বহুনির্বাচনী অংশ প্রশ্নের শতকরা চিত্র দেওয়া হল :

১। জ্ঞানমূলক         :   মোট প্রশ্নের     ৪০%

২। অনুধাবনমূলক      :   মোট প্রশ্নের     ৩০%

৩। প্রয়োগমূলক            :   মোট প্রশ্নের     ২০%

৪। উচ্চতর দক্ষতামূলক   :   মোট প্রশ্নের     ১০%

সৃজনশীল অংশ বোর্ড নির্ধারিত নির্দেশ মোতাবেক। বর্তমানে ১১টি প্রশ্ন দিতে হয় ৭টি’র জবাবের জন্য (ব্যবহারিক পরীক্ষা হয় এমন বিষয় ছাড়া)।

দ্বিতীয়ত, শিক্ষক-এর খাতা মূল্যায়ণ ও নম্বর প্রদান সম্পর্কে ঃ-

·      শিক্ষক মানেই পিতা-মাতা বা অভিভাবক। সুতরাং একজন আদর্শ শিক্ষক খাতা মূল্যায়নের সময় প্রথমেই নিজেকে পরিপূর্ণ স্বাভাবিক রাখবেন অর্থ্যাৎ কোন মানসিক প্রেসার বা মেজাজ হারানো অবস্থায় খাতা মূল্যায়নে বসবেন না। এ অবস্থায় আপনি সঠিক মূল্যায়ন করতে পারবেন না। ফলে আপনার ব্যক্তিগত সমস্যার কারণে একটি শিক্ষার্থী সারাজীবন পিছিয়ে পড়তে বা নষ্ট হয়ে যেতে পারে। আর তাঁর দায়-ভার সবসময়-ই আপনার উপর বর্তাবে।

·    সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তরের জন্য Fraction মার্কস দেওয়া যাবেনা। অর্থ্যাৎ ভগ্নাংশ মার্কস দেওয়া যাবে না। যেমন : ০.৫, ১.৫, ২.৫, ৩.৫ ইত্যাদি। নম্বর প্রদানের ক্ষেত্রে সঠিক হলে পূর্ণ মার্কস পাবে শিক্ষার্থী আর ভুল হলে কাটা যাবে। তবে যদি এমন হয়, ভুল মিশ্রিত সঠিক উত্তর, তাহলে ভুলের পরিমান কম হলে পূর্ণ মার্কস দিতে হবে। কারন শিক্ষার্থীর ক্ষেত্রে সবসময় ইতিবাচক দৃষ্টি রাখতে হবে, সৃজনশীল খাতা দেখার নিয়ম।creative question marks -এর ক্ষেত্রে।

·      কোন অবস্থাতেই প্রশ্নের উত্তর না জেনে বা আংশিক জেনে খাতা মূল্যায়ন করা যাবে না। (সে কারণে আদর্শ শিক্ষকগণ প্রশ্ন প্রণয়নের সময় সম্পূর্ণ ‘উত্তর ক্লু’ নোট করে রাখে)। আপনি অনুমান নির্ভর খাতা মূল্যায়ণ শিক্ষক হিসেবে কিছুতেই করতে পারেন না।

·      খাতা মূল্যায়ণে পক্ষপাতদুষ্টু আচরণ অবশ্যই বর্জণীয়। যেসব খাতা মূল্যায়ণ করতে শিক্ষার্থীর পরিচয় জানা সম্ভব সেসব ক্ষেত্রে নিজের সন্তান/আত্মীয় এবং অন্যের সন্তান এসব মাথায় নিয়ে মূল্যায়ণ করা গর্হিত কাজ। মনে রাখবেন, আপনি যেমন অন্যের সন্তানের অমঙ্গল করছেন, তেমনিভাবে আপনার সন্তানের খাতাও অন্যের হাতে মূল্যায়িত হচ্ছে বা হবে। সুতরাং  ‘Be Careful’ প্রবাদ আছে, Tit For Tat, কারণ নিয়তি কখনো অবমূল্যায়ণ করে না।

·      একটি খাতা মূল্যায়ণ শেষ হলে শিক্ষার্থীর প্রাপ্ত নম্বর সতর্কতার সহিত গুণতে হবে, প্রয়োজনে একাধিকবার গুণে নিশ্চিত হন। ২/১ মার্কের জন্য কোন গ্রেড মিস হলে নিজ গুণে বাড়িয়ে দিন।

এক নজরে নম্বর প্রদানের বিবরণ :

শিক্ষামূলক আর্টিকেল পড়ুন এখানে

# উত্তর মূল্যায়ণে ফ্র্যাকশন নম্বর দেওয়া যাবে না।

# জ্ঞানমূলক প্রশ্নের ক্ষেত্রে শুধু জ্ঞান থাকলেই পূর্ণ নম্বব দিতে হবে।

# আনুধাবনমূলক প্রশ্নের উত্তরে জ্ঞান ও অনুধাবন-এ আলাদা ১+১ নম্বর দিতে হবে।

# প্রয়োগমূলক প্রশ্নের উত্তরে জ্ঞান, অনুধাবন ও প্রয়োগ-এ আলাদা ১+১+১ নম্বর দিতে হবে।

# উচ্চতর দক্ষতা প্রশ্নের উত্তরে জ্ঞান, অনুধাবন, প্রয়োগ ও দক্ষতা-এ আলাদা ১+১+১+১ নম্বর দিতে হবে।

# উত্তর না লিখলে বা সম্পূর্ণ বিপরীত উত্তর লিখলে ০ দিতে হবে।

# সৃজনশীল অংশের প্রশ্নের প্রতিটি উত্তরের জন্য সর্বনিম্ন ৪ এবং সর্বোচ্চ ১০ নম্বর দেওয়া যাবে।

# বহুনির্বাচনি অংশে প্রতিটি সঠিক উত্তরের জন্য ১ এবং ভুল হলে ০ দিতে হবে।

শিক্ষা মানেই বিনোদন—উপভোগ করতে। এখানে ক্লিক করুন

আসুন এখন জেনে নিই শিক্ষার্থীরা সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর কীভাবে দিবে :

পরীক্ষার হলে শিক্ষার্থীরা

শিক্ষার্থীরা অবশ্যই জেনে গেছে যে, বর্তমান শিক্ষা পদ্ধতিতে মুখস্থনির্ভরতা নাই। বিষয়বস্তু পড়ে, নিজের মস্তিষ্কে নিয়ে তার মূলভাব জেনে নিজের ভাষায় সাজিয়ে-গুছিয়ে লিখতে হয়। ঠিক যেমন কোন গল্প কাহিনী বা সিনেমা প্রায় ২-৩ ঘন্টা দেখে সেসবের সারাংশ ৫-৭ মিনিটে বলে ফেলা এবং তা থেকেই বুঝে নেওয়া গল্পের মুলভাব।

‘জ্ঞানমূলক’ প্রশ্নের জন্য সরাসরি বই থেকে তথ্য নিয়ে শুধুমাত্র ১টি শব্দে উত্তর দিতে পারবে।

শিক্ষামূলক আর্টিকেল পড়ুন এখানে

‘অনুধাবনমূলক’ প্রশ্নের জন্য বই থেকে কিছু এবং নিজ ধারনার মাধ্যমে জ্ঞান এবং অনুধাবন মিলে উত্তর করতে হবে।

‘প্রয়োগমূলক’ প্রশ্নের জন্য মূখস্থ বিদ্যা কোনো সাহায্য করবে না। বিষয়বস্তু পড়ে-বুঝে সম্পূর্ণ নিজের ভাষায় জ্ঞান, অনুধাবন এবং প্রয়োগ মিলে উত্তর করতে হবে।

‘উচ্চতর দক্ষতামূলক’ প্রশ্ন নিজেকে বিষয়বস্তুর গভীর থেকে গভীরতম জায়গায় নিয়ে যাবে। এ ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ চিন্তন দক্ষতার মাধ্যমে অবারিত যোগ্যতা দিয়ে জ্ঞান, অনুধাবন, প্রয়োগ ও দক্ষতা মিলে উত্তর করতে হবে।

সকল শিক্ষার্থীকে মনে রাখতে হবে প্রশ্নের উত্তর লিখার সময় মূলভাব তুলে ধরে সংক্ষিপ্ত বিবরণ দিতে হবে। অন্যথায় সময়ের অভাবে সব প্রশ্নের জবাব দেওয়া যাবে না। এছাড়াও অতিরিক্ত লেখা শিক্ষকের বিরক্তির কারন হয়ে দাঁড়ায়, ফলে নম্বর পাওয়ার ক্ষেত্রে বড় প্রভাব পড়ে।

আশা করছি আপনাদের কিছুটা হলেও সাহায্য করতে পেরেছি, সৃজনশীল খাতা দেখার নিয়ম।creative question marks -লিখার মাধ্যমে।

ধন্যবাদান্তে;

         মসনদ সাগর Moshnod Sagor

Sobar Jonno Blog সবার জন্য ব্লগ

লিখেছেন : মসনদ সাগর, 

শিক্ষক, মাস্টার ট্রেইনার, লেখক ও ফ্রিল্যান্সার, 

by- sobar jonno blog -সবার জন্য ব্লগ